রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে আবারো কালীমন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দূর্বৃত্তরা। বুধবার দিবাগত রাতে কোন একসময় উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের নাথপাড়ায় সুবীর কুমার নাথের বাড়ীর মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। দূর্বৃত্তরা মন্দিরের ভেতরে থাকা পাঁচটি প্রতিমা ভাঙচুর করেছে।

এদিকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে একই উপজেলার সিলিমপুর সেনপাড়ার সার্বজনীন কালীমন্দিরের তালা ভেঙ্গে প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এক রাতের ব্যবধানে দুইটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় এলাকার হিন্দু সমাজের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বাড়ির মালিক সুবির কুমার নাথ ঢাকায় বসবাস করেন। বাড়ীর দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বিমল বর্মণ বলেন, আমি বৃহস্পতিবার সকালে মন্দিরের ভেতরে প্রতিমা ভাঙচুরের বিষয়টি দেখতে পাই। সেখানে কে বা কারা কালী, মহাদেব, শীতলা, যগিনীসহ মোট পাঁচটি প্রতিমা ভাঙচুর করে ফেলে রেখেছে।

এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহাদুজ্জামান মিয়া, কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বিকম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপা, কালিহাতী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল মনির, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুদীপ কুমার দত্ত মানু প্রমুখ।

ওই বাড়ীর মালিক সুবির কুমার নাথ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এই মন্দিরটি প্রায় ৭০ বছরের পুরনো। এখানে প্রতি বছর কালী ও শীতলা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও মন্দিরে হামলা হয়নি। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে অপরাধীরাদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

কেন্দ্রীয় পূজা উদ্যাপন কমিটির সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, কুচক্রি একটি মহল বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবী করছি। এক দিনের ব্যবধানে একই উপজেলা পরপর দুইটি মন্দির প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।

কালিহাতী থানার ওসি হাসান আল মামুন বলেন, নাথপাড়া মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। জড়িতরা দ্রুত গ্রেফতার হবে বলে আশা করছি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, একটি চক্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই কাজগুলো করছে। অপরাধীদের ধরতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। একজনকে ধরতে পারলেই পুরো গ্যাং বের হয়ে আসবে।

উল্লেখ্য, নাথপাড়া কালীমন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের আগের দিন উপজেলার সেনপাড়া সার্বজনীন কালীমন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। সেনপাড়া মন্দির কমিটির সভাপতি প্রতিশ চন্দ্র অজ্ঞাতনামা আসামী করে কালিহাতী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু এ মামলায় এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ওইদিন সেনপাড়া কালীমন্দির পরিদর্শন করে স্থানীয় এমপি হাছান ইমান খান সোহেল হাজারী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়সহ আরো অনেকে। এর আগে ২০১৪ সালে সিলিমপুর দাশপাড়া মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করেছিলো দূর্বৃত্তরা।

(আরকেপি/এসপি/নভেম্বর ১৪, ২০১৯)