সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা কেন্দুয়া, (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চাঞ্চল্যকর প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলাটির তদন্ত চলছে ধীর গতিতে। সি.আই.ডি সাইবার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য আটকে আছে মামলার চার্জশিট। 

বাংলাদেশ পুলিশ সি.আই.ডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার বরাবর সাইবার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য পাঠালে ৫ মাসেও এর মতামত আসেনি। মতামত পেলেই মামলাটির দ্রুত চার্জসীট দিতে পারেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

চলতি বছর ২৮ জুন নেত্রকোণা জেলা সদরের বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। একটি প্রভাবশালী চক্র কিছু পরীক্ষার্থীদের সাথে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে ওই পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ করে। কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ছোটনের নেতৃত্বে কয়েকজন নারী শিক্ষিকা সহ ওই চক্রটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ করে এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোনে পরীক্ষা কেন্দ্রে উত্তর সরবরাহ করছিল। কিন্তু গোপন সূত্রে খবর পায় কেন্দুয়া থানা পুলিশ।

কেন্দুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ও ওসি মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ পৌর এলাকার টেঙ্গুরী ছয়ানী মহল্লায় বিতর্কিত শিল্পপতি মনিরুজ্জামান ভূঞা শামীমের বাড়ি ঘেরাও করে। দীর্ঘ ৩ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ওই বাড়ির দু’তালা ঘর থেকে ১২ নারী সহ ৩৭ জনকে আটক করে, এ ঘটনায় কেন্দুয়া থানার পুলিশের এস.আই আবুল বাশার বাদী হয়ে ৩৭ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫০/৬০ জনকে আসামী করে কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ কয়েকটি ল্যাপটপ, এন্ড্রোয়েড মোবাইল ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স সরঞ্জামাদী জব্দ করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে জানান, মামলার তদন্তের স্বার্থে মামলার প্রধান আসামী বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান ছোটন সহ নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আজহারুল ইসলাম, শহিদুজ্জামান ভূঞা মিন্টু, নওপাড়া সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আবুল বাশার, দনাচাপুর গ্রামের বিকাশ দে, দুলাইন গ্রামের মোঃ জুয়েল মিয়া, নওপাড়া গ্রামের বিলাশ সরকার ও দিগদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মজিবুর রহমানকে নেত্রকোনা আদালতের নির্দেশে ২ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই চলছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ সি.আই.ডির বিশেষ পুলিশ সুপার সাইবার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য আবেদন করা হয়।

তিনি জানান, এখনও মতামত আসেনি। তবে জব্দকৃত আলামতের বিশেষজ্ঞ মতামত এলেই আরো কিছু তদন্তের পর মামলার চার্জসীট দেয়া হবে। মামলাটির সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে নিখুঁত তদন্তের জন্য উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে দাবী ওঠে। এদিকে ১২ নারী সহ মামলার সব আসামী উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত রয়েছে।

তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন প্রধান শিক্ষক ও ৫ জন সহকারি শিক্ষককে প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ জন সহকারি শিক্ষককেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন কর্তৃপক্ষ।

কেন্দুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান শুক্রবার বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় আছে। তবে সি.আই.ডির সাইবার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মতামত পেলে আরো কিছু তদন্ত করা হবে। ওই তদন্ত শেষে মামলাটি বিচারের জন্য আদালতে পাঠানো হবে।

(এসবি/এসপি/নভেম্বর ১৫, ২০১৯)