বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রকাশ্য দিবালোকে ইসরাফিল শেখ (৩২) নামে এক যুবকের উপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। নির্মাণাধীন খুলনা-মোংলা রেলওয়ে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে নানা অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্য গণমাধ্যমে তুলে ধরায় তার উপরে এই হামলা হয় বলে অভিযোগ ওই যুবকের। গতকাল সকালে ফকিরহাট উপজেলার লখপুর ইউনিয়নের জাড়িয়া মাইটকুমড়া এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে।

গত শুক্রবার একটি বেসরকারী টেলিভিশনের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান তালাশে বাগেরহাটে নির্মানাধীন খুলনা-মোংলা রেলওয়ে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে নানা অনিয়ম, দূর্নীতির হরিলুট-৩ নামে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়।

ইসরাফিল শেখ ফকিরহাট উপজেলার লখপুর ইউনিয়নের জাড়িয়া মাইটকুমড়া গ্রামের ছাত্তার শেখের ছেলে। এই প্রকল্পের জন্য তার জমিও অধিগ্রহণ করে সরকার। জমির ক্ষতিপূরণে টাকা প্রদানে স্থানীয় দালালেরা প্রশাসনের সহযোগিতায় লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছিল এই যুবকসহ স্থানীয় জমিমালিকরা।

আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফকিরহাট উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও হামলাকারীদের এখনো আটক করতে পারেনি।

হামলার শিকার ইসরাফিল শেখ এই প্রতিবেদককের কাছে অভিযোগ করেন, গতকাল সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাগেরহাট শহরে আসার পথে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোরশেদ আলমের বাড়ির সামনে পৌছলে আজিজুল হকের নেতৃত্বে ৫/৬ জনের একটি দল লাঠিসোটা নিয়ে আমার উপর হামলা চালায়। এসময় আমার ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে আসলে তারা পালিয়ে যায়। এই আজিজুল হক নির্মানাধীন খুলনা-মোংলা রেলওয়ে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে নিজে ভূয়া জমির মালিক সেজে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এই দূর্নীতির তথ্য গনমাধ্যমকে দেয়ায় আজিজুল ক্ষিপ্ত হয়ে আমার উপর এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ ইসরাফিল শেখের। আমি ঘটনাটি পুলিশ জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, খুলনা-মোংলা রেলওয়ে প্রকল্পে সরকার জমি অধিগ্রহণে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ওই জমি অধিগ্রহণের শুরুতে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজসে বেশকিছু লোক ভূয়া জমি মালিক সেজে সরকারের মোট অংকের টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। তার মধ্যে ফকিরহাট উপজেলার লখপুর ইউনিয়নের জাড়িয়া মাইটকুমড়া গ্রামের আজিজুল হক অন্যতম। তিনিসহ এই এলাকার বেশ কিছু ভূয়া জমি মালিক সেজে রেলওয়ে প্রকল্পের কয়েক কোটি টাকা ইতিমধ্যে উত্তোলন করেছেন। যার তথ্য প্রমাণ আমার হাতে রয়েছে।

সম্প্রীতি ওই অনিয়ম, দূর্নীতির তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে স্থানীয় লোকজন বেসরকারী টেলিভিশনের অনুসন্ধানী তালাশকে সাক্ষাৎকার দেয়। আমি ওই তালাশ টিমকে সহযোগিতা করায় ক্ষুব্দ হয়ে আজিজুল হক আমার উপর এই হামলা চালিয়েছে। আমি ওই হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।

হামলার কথা স্বীকার করে ফকিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ ন ম খায়রুল আনাম এই প্রতিবেদককে বলেন, হামলায় আহত ইসরাফিল শেখকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে হামলাকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের ধরা সম্ভব হয়নি। তাদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আহত ইসরাফিল শেখ সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হবে।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হামলার অভিযোগ ওঠা আজিজুল হক তা অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন ইসরাফিলের বিরুদ্ধে। আজিজুল হক অভিযোগ করেন, আমার প্রতিবেশি ইসরাফিল শেখ সম্প্রতি আমার ছোট ভাইয়ের বউ নাসরিণের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই চাঁদার টাকা না দেয়ায় ইসরাফিল আমার ভাই বউ নাসরিণ ও ভাতিজা মিরাজের উপর হামলা করেছে। তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

(এস/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০১৯)