ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্র ঘোষিত অনুপ্রবেশকারির তালিকায় নাম থাকার পরও ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ইউনিয়ন আ’লীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ পেলেন বিএনপি থেকে আ’লীগে অনুপ্রবেশকারি রফিকুল ইসলাম নামে এক নেতা। 

সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে বালিয়াডাঙ্গীর ভানোর ইউনিয়ন আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ইউনিয়নের হলদিবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে ইউনিয়নআ’লীগ সভাপতি আব্দুল ওয়াহাবের সভাপতিত্বে প্রথম পর্বের আলোচনা সভায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার রায় সহ উপজেলা ও ইউনিয়ন আ’লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে দ্বিতীয় অধিবেশনে ভোটের মাধ্যমে ভানোর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রফিকুল ইসলাম রফিক।

এদিকে ইউনিয়ন আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে বিএনপি থেকে দলে অনুপ্রবেশকারি মো: রফিকুল ইসলামর এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেন ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক হামলা-মামলার শিকার আওয়ামী পরিবারের সন্তান ও ইউনিয়ন আ’লীগের সদস্য মো: জাহাঙ্গীর আলম মামুন।

অভিযোগ পত্রে তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিবরণ তুলে ধরে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে তার অবর্তমানে তার পিতাকে তুলে নিয়ে যাওয়াসহ বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক হামলা-মামলার বিবরণ তুলে ধরেন এবং নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক যে সেই সময়ে আওয়ামী পরিবারগুলোসহ তার উপর কিরকম অসহনীয় নির্যাতন চালান তার বর্ণনা দেন। সেখানে তিনি আরও উল্লেখ করেন রফিকুল ইসলাম বর্তমান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর একান্ত আস্থাভাজন ব্যক্তি ও তার ভাই মানিক ২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবর রহমান হল ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো।

এছাড়াও ইউনিয়নআ’লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকার সুবাদে কাউন্সিলের আগে নিজের পছন্দের লোকদের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য বানিয়ে ইচ্ছে মতো ভোটার তৈরী করেন। এমনকি নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে ৯ নং ওয়ার্ডের এক জামায়াত পরিবারের সদস্যকে সা: সম্পাদক ও ৮ নং ওয়ার্ড এর সভাপতি নির্বাচিত করেন বিএনপি পরিবারের এক সদস্যকে-যা মোটেও কাম্য নয়।

এ বিষয়ে কথা হলে জাহাঙ্গীর আলম মামুন জানান, যে ব্যক্তি বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী পরিবারগুলোর উপর পাশবিক নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানি করেছে তাকে আজ আ’লীগের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হচ্ছে। অথচ গণতন্ত্রের মানষকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের শুদ্ধি অভিযানে নেমে নিজে ঘোষণা দিয়েছেন দলে যারা অনুপ্রবেশকারি তারা যাতে কোনভাবেই দলীয় পদ-পদবী না পায়। এমনকি তিনি যারা দলের অনুপ্রবেশকারী তাদের নামের তালিকা পর্যন্ত প্রকাশ করেছেন, যাতে কেউ দ্বিধা-দ্বন্দে না পড়েন।কিন্তু আজ তার নির্দেশনাও উপেক্ষিত। তবে আমি আশাবাদি নেত্রী নিজেই যেহেতু এসব বিষয় মনিটরিং করছেন, সকল ষড়যন্ত্র অনুধাবন করে তিনি দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন।

কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্যকরে দলে অনুপ্রবেশকারি রফিকুল ইসলাম কিভাবে ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন-এমন প্রশ্নে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার রায় জানান, নির্বাচিত রফিকুল ইসলামের সা: সম্পাদক পদ পাওয়া নিয়ে এর আগে ২০১২ সালের কাউন্সিলের সময় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেসময় ১৫ দিনের জন্য কাউন্সিল স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিলো। উল্লেখিত সময়ে আমি ব্যক্তিগত কাজে আমেরিকা অবস্থান করি। পরে এসে শুনি তাকে পরবর্তীতে বালিয়াডাঙ্গী অডিটোরিয়াম হলে কাউন্সিল অধিবেশন করে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রফিকুল যে দল ত্যাগ করে আ’লীগে প্রবেশ করেছে তার কোন ডকুমেন্ট আমার কাছে নেই, শুধু জানি সে আ’লীগে যোগদান করেছে। তবে কিভাবে আ'লীগে যোগ দিয়েছে সেটাও আমি জানি না। আর অনুপ্রবেশকারী সংক্রান্ত কোন চিঠি কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত আমরা হাতে পাইনি। এ সংক্রান্ত চিঠি হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাদেক কুরাইশীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, দলে অনুপ্রবেশকারিরা যাতে কোনভাবে দলীয় পদ-পদবী না পায় সেদিকে দৃষ্টি রয়েছে।তারপরও যদি কেউ পদ-পদবী পায় সেটা সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(এফ/এসপি/নভেম্বর ১৯, ২০১৯)