চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি কমপ্লেক্সের আল-আমিন এতিমখানার পরিত্যাক্ত ভবনের ছাদ ধসে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় এক শিশু শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিনগত রাত আনুমানিক ১০.১৫ মিনিটের সময় এতিম খানার পরিত্যাক্ত ৪তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদে শিক্ষকদের সঙ্গে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আসছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য একত্রিত হলে এই দুর্ঘটনার শিকার হয়। আহত হওয়া শিক্ষার্থীরাসহ ছাদের মাঝখানের অংশ ধসে নিচে পড়ে যায়। এসময় ওই স্থানে থাকা প্রায় ৫০জন শিক্ষার্থী ছিল। তারা সকলেই কম-বেশী আহত হয়েছে।

আহতদের মধ্যে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ৪৪জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ১২জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন রয়েছে।

খবর পেয়ে সাথে সাথে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এতিম শিক্ষার্থীরা হলেন-সিহাব (১৪), আইনুদ্দিন (১৩), নাহিদ (১৩), সাব্বির (১৩), ইব্রাহীম (১৩), তরিকুল ইসলাম (১৩), আব্দুল আজিজ (১৩), সজিব (১৫), আব্দুল্লাহ (১৪), রহমান (১৫), নাহিদ (১৪) ও সিনিয়র সহকারী মৌলভী মোহাম্মদ হোসেন (৫০)। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেওয়া শিশুর নাম হচ্ছে সিয়াম (১০)।

রাত ২টায় মতলব দক্ষিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আহম্মদ উল্যাহ জানান, মতলব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২৫জন। এর মধ্যে ৯জন ছাড়া বাকিদের চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ও ৩জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।

ফরাজিকান্দি কমপ্লেক্সের মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শহীদ উল্যাহ বলেন, এতিমখানার সকল ছাত্রদের মাদ্রাসার আভ্যন্তরীন পরীক্ষা শেষ হয়েছে শনিবারে। পরদিন রবিবারে ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে প্রস্তুতির জন্য কাউকে ছুটি দেওয়া হয়নি। প্রস্তুতি নিতে কথা বলার জন্য ডেকে আনা হয় ঘটনাস্থলে। একত্রিত হলেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পর-পরেই স্থানীয়দের ও মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আহতদের মতলব উত্তর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ১৭জন। এছাড়াও কিছু আহত ছাত্র আনন্দ বাজার ও ছেঙ্গারচর বাজারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।

এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার। তিনি পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে আহত শিশুদের চিকিৎসার তদারকি করেন। একইভাবে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা হক।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ শওকত ওসমান জানান, ঘটনার পরেই আমরা ৩ হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলের সাথে সার্বিক যোগাযোগ রক্ষা করেছি। ঘটনাস্থলের ওই ভবনটি পূর্ব থেকেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

খবর পাওয়ার সাথে সাথে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মতলব উত্তর ফরাজিকান্দি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান ও পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ঘটনাস্থলসহ সব আহতদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তারা এখন ভালো আছে। যারা গুরুতর আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা সকলে আহত শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষনিক চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখছি।

(এ/এসপি/নভেম্বর ২৪, ২০১৯)