রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি : সম্প্রতি একটি প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সে করে হার্ডস্ট্রকের রোগী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজে। সে-সময় রোগীর অবস্থা বেগতিক হলেও ইচ্ছা থাকা সত্বেও এম্বুলেন্সটি ভালভাবে ড্রাইভিং করতে পারছে না ড্রাইভার। শুধুমাত্র রাণীশংকৈল থেকে পীরগঞ্জ মোট ১২ কিলোমিটার সড়ক যেতেই সময় লেগে যায় প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। অথচ রাণীশংকৈল থেকে দিনাজপুর যেতে স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে সর্বোচ্চ দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সেখানে সড়ক সংস্কারের নামে বেহাল করে রাখা সড়কে রাণীশংকৈল থেকে পীরগঞ্জ যেতে সময় লেগে গেলো পৌনে এক ঘণ্টা। সড়ক বেহাল করে রাখায় এমন অতিরিক্ত সময় লাগছে বলে মুঠোফোনে অভিযোগ করেন ঐ এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার সুমন আলী। 

একইভাবে বিভিন্ন অফিস আদালত যেতেও চরম বেগ পেতে হচ্ছে পথচারীদের। এছাড়াও ছোট ছোট যানবাহন গুলো বিশেষ করে ভ্যানগাড়ী গুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল - পীরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলের সময়। পীরগঞ্জ উপজেলা থেকে রাণীশংকৈল উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলো ৬মিটার সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে। এতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর সাথে সাথেই সমস্ত সড়কের কার্পেটিং তুলে সড়কটি চলাচলের অযোগ্য করে ফেলে রেখেছে দীর্ঘদিন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে সব শ্রেণীর পথচারী।

সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাণীশংকৈল পুরাতুন সেন্টার থেকে পীরগঞ্জ জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং তুলে আবার ঐ কার্পেটিং সড়কে কোন রকম এক্সভেটর মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে মিনিবাস মাইক্রোবাস-সহ যে কোন চার চাকার যানবাহন গেলেই চরম পরিমাণে ধুলো বালু উড়ে পরিবেশ চরম ভাবে বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও চাকা নষ্ট হওয়ার ভয়ে ভ্যানগাড়ী গুলো খুব ধীর গতিতে ড্রাইভিং করা হচ্ছে । কার্পেটিং কোন ধরনের ফিনিশিং না করায় সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সাধারণ একটি সাইকেল মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়াই এখন বিপদ জনক হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক পথচারী।

সড়কে যত অনিয়ম: জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প জোনের আওতায় রাণীশংকৈল মোড় থেকে পীরগঞ্জ উপজেলার জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলো ৬মিটার সড়ক প্রায় ৩৪ কোটি টাকা টেন্ডার নিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাইনদ্দীনবাসী সড়ক সংস্কারের কাজটি পেলেও তা বাস্তবায়ন করছে আরেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এরোস্টেকেট প্রাঃ লিঃ। সড়ক পথম পর্যায়ে কার্পেটিং তুলে তা আবার এক্সাভেটিং মেশিন দিয়ে কোন রকম ভেঙ্গে পুনরায় সড়কের উপর ফেলে রেখে সড়ক চলাচলের অযোগ্য করে রাখা হয়েছে। যানবাহন চলাচলের কারণে ধুলো বালু উড়ে পরিবেশ নষ্ট হলেও নিয়মনুযায়ী পানি ছিটানো হয় না সড়কে।

সড়কের দু’ধারের সলিংয়ে টেন্ডারেই মাটি সরবরাহের বরাদ্দ থাকলেও সড়কের দুধারের মালিকানা জমির মাটি কেটে সলিংয়ে দিয়ে সে বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। সড়কের রেজিংয়ে ১নম্বর ইট দেওয়ার কথা থাকলেও ভাটার ২ নম্বর ৩ নম্বরসহ বিভিন্ন ধরনের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে গোগর নামক এলাকার এক ইউপি সদস্যর নেতৃত্বে সম্প্রতি কাজ আটক করে দেওয়া হয়েছিলো।

এ নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই ঠাকুরগাঁও সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ উপ-সহকারী প্রকৌশলী রায়হান আলী। এছাড়াও সামন্যতম তথ্য দিতেও নারাজ তিনি। উপজেলার গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য নিতে হলে জেলা অফিসে গিয়ে নিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন। এদিকে এরোস্টেকেট প্রাঃ লিঃ এর পীরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করেও সংশ্লিষ্ট কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হন নি। এবং কি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটারের সাথে যোগাযোগ করতে মুঠোফোন নম্বর পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।

ঠাকুরগাঁও সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মুনসুর আলীর মুঠোফোনে একাধিক কল দিলেও তাতে তিনি সাড়া দেননি। পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায় নি।

(কেএস/এসপি/নভেম্বর ২৫, ২০১৯)