বাগেরহাট প্রতিনিধি : হযরত খানজাহান আলী (র:) পন্যভুমি বাগেরহাট শহরের রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের অভয়াশ্রম। এখানের হাজার হাজার পাখি দেখতে প্রতিদিন আসেন দেশ- বিদেশের পর্যটকরা। এই পাখি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকদের আকর্ষন করছেন। এবার ঈদুল ফিতরের ছুটিতে আসা অনেক পর্যটক এই পাখির অভয়াশ্রম দেখে এবং ছবি তুলে আনন্দ উপভোগ করেছে।

বাগেরহাট শহরের প্রণকেন্দে জেলা প্রশাসকের বাসভবন ও পুরাতন কোট মসজিদ প্রাঙ্গন, পুরাতন আদালত চত্তর ও সাংস্কৃতি ফাউন্ডেশন অঙ্গন জুড়ে রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের অভয়াশ্রম। এখানে অসংখ্য গাছে এসব পাখিদের বসাবস। চারিদিকে নিরাপত্তার কারনে প্রায় ৩০-৩৫ বছর ধরে সাদা বক, কাল কুচ, হাঁস পাখি ও পানকৌড় পাখি এখানে আবাসস্থল গড়ে তোলে। এখন পাখিদের অভয়াশ্রম হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে এলাকাটি।

দক্ষিনাঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জের হারিয়ে যাওয়া পাখিদের অভয়াশ্রম বাগেরহাট শহরে দেশী-বিদেশী পর্যটরা পাখি দেখতে আসেন। স্থানীয়রা বলছেন বাগেরহাটের পাখিদের অভয়াশ্রম সকলের কাছে সুনাম অর্জন করেছে।

এই অভয়াশ্রমের পাখি দেখতে আসা অনেকের মধ্যে সুন্দরবন বিশেষঞ্জ ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে এখানে ৩-৪ প্রজাতির বসাবস করছে। তাই পাখির এই অভয়াশ্রম দেখে খুব ভাল লাগছে। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে এসব পাখি। তবে প্রতিটি গাছে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে কয়েক শ’ করে হাঁড়ি বেধে দিলে পাখিরা আর মনুষের গায়ে মল ত্যাগ করতে পারবে না। পাখিরা বাসা বাধবে হাড়ির মধ্যে। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বাগেরহাট থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা শেখ নজরুল ইসলাম জানান, সাংস্কৃতি অঙ্গন জুড়ে প্রতিনিয়িত নানা অনুষ্ঠানের সময় পাখিদের বিষ্টায় লোকজন নানা বিড়ম্ববনায় পড়লেও তারা এটা স্বাভাবিকভাবে মানিয়ে নেয়। এ কারনে কেউ তাদের ক্ষতি করে না। তাই এই অভয়শ্রামের প্রতিটি গাছে হাজার হাজার পাখি বসাবস করছে।

বাগেরহাট সুন্দরবন ট্যূরিষ্ট ক্লাব নির্বাহী পরিচালক আব্দুল্লাহ বনি বলেন, ‘শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিরাপত্তার কারনে এখানে একাধিক গাছে পাখিদের বসাবস। এ কারনে পাখিরা তাদের বংশবিস্তার করে চলেছে। চারিদিকে নিরাপত্তা থাকায় দেশী-বিদেশী পর্যটরা পাখি দেখতে আসেন। আমরা এটিকে পাখির অভয়াশ্রম হিসাবে ধরে রাখতে চাই।

বাগেরহাট সাংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারন সম্পাদক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু বলেন, ‘মায়েরা যেমন তার সন্তানকে আগলে রাখে, এখানে যথেষ্ট নিরাপত্তা থাকায় তেমনি পাখিরা তাদের বংশ বিস্তার করে পাখির ছানাদের লালন পালন করে চলেছে। বাগেরহাট চিংড়ি ও মৎস্য ঘেরসহ খাল-বিলে যথেষ্ট পরিমানে মাছ থাকায় পাখিদের খাবারে কখনও সমস্যা হয় না। নিরাপদ আশ্রাস্থল মনে করে এখানে যুগ যুগ ধরে বসাবস করছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মুঃ শুকুর আলী বলেন, ‘সকলের সহনশীল হতে হবে এই অভয়াশ্রমের পাখি রক্ষায়। আমাদের দেশের অসংখ্য প্রজাতির পাখি প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই এ পাখি বাগেরহাটের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে এই সময়টি পাখির বংশ বিস্তারের। এ কারনে পাখির সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(একে/এইচআর/আগস্ট ০৫, ২০১৪)