স্টাফ রিপোর্টার : ঈদ বাজারের ‘পাখি’ পোশাক নিয়ে সারাদেশ জুড়ে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় বাংলা চ্যানেল স্টার জলসার একটি সিরিয়ালের ‘পাখি’ চরিত্রের নামে তৈরি মেয়েদের এই পোশাক ঈদে নিতে না পেরে আত্মহত্যা এবং তালাকের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঈদের আনন্দে ভাটা ফেলার কারণ স্টার জলসার মতো চ্যানেলগুলোর সিরিয়াল। স্টার জলসা ছাড়াও ভারতীয় কয়েকটি চ্যানেলের বাংলাদেশে সম্প্রচার বন্ধের দাবি উঠলেও সরকারের পক্ষ থেকে এর কোনো উদ্যোগ নেই। তবে ডাউনলোড লিঙ্ক ফি বাড়ানো হবে।

তথ্যসচিব মরতুজা আহমদ বলেন, স্টার জলসা চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধের উদ্যোগ বর্তমানে নেই।

স্টার জলসার ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালের পাখি চরিত্রের পরনে থাকা বিশেষ এক ধরনের থ্রি-পিস এবারের ঈদে বাংলাদেশের বাজারে কিশোরী-তরুণীদের বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করে। ভারত থেকে আসা ও এর অনুকরণে এদেশে তৈরি ওই থ্রি-পিসে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব হয়ে যায়।

প্রায় ১৩ হাত ঘেরের পাখি ড্রেসটি সুতি কাপড়ে তৈরি হওয়ায় চাহিদা ছিল বেশি। দোকানভেদে এক একটি ড্রেসের দাম হাঁকা হয় আট থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

দেশের কিশোরী, তরুণী এবং নারীদের অধিকাংশই ভারতীয় চ্যানেল জি বাংলা ও স্টার জলসার সিরিয়ালের প্রতি আসক্ত। সিরিয়ালগুলোর চরিত্র, পোশাক-আশাকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা।

এসব সিরিয়ালের প্রভাব ছিল গতবারের ঈদেও। সেবারের ক্রেজ ছিল মাসাককালি, ঝিলিকসহ অন্য নামের পোশাক। এবার এই ‘পাখি’ পোশাক না পাওয়ায় মানিকগঞ্জের ঘিওরে ঈদের আগে আত্মহত্যা করেছে ছালেকা নামের এক মাদ্রাসাছাত্রী।

গত ২৭ জুলাই গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নে ‘পাখি’ ড্রেস না পাওয়ার কষ্টে আত্মহত্যা করে নূরজাহান খাতুন নামের আরেক কিশোরী।

চাপাইনবাবগঞ্জে আম ব্যবসায়ী বাবার কাছে ‘পাখি’ ড্রেস চেয়ে না পেয়ে হালিমা খাতুন নামের ১৩ বছরের এক কিশোরী গত ৯ জুলাই গলায় ফাঁস দেয়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় ২২ জুলাই।

যশোরে ‘পাখি’ কিনে না দেওয়ায় স্বামীকে তালাক দিয়েছেন এক তরুণী।

এসব ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধের দাবি ওঠে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সম্প্রচার) মোহা. আবুল হোসেন বলেন, স্টার জলসা চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধের উদ্যোগ নেই।

তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত না থাকলেও ডাউনলোড লিঙ্ক ফি বাড়াচ্ছে সরকার।

একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ভারতের চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে সম্প্রচারের জন্য ফি বাড়ানো হবে। এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনায় অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে।

ভারতীয় পে-চ্যানেলের ডাউনলোড লিঙ্ক ফি দেড় লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হবে। বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে তা ভেটিংয়ের জন্য আছে।

বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশেই ২৪টি টিভি চ্যানেল চালু আছে। বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশের চ্যানেলগুলো প্রাইম চ্যানেলে (প্রথম দিক থেকে) দেখানোর দাবি থাকলেও হয়নি।

অভিযোগ আছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভারতীয় চ্যানেলগুলোই প্রাইম চ্যানেলে রয়েছে। ভারতীয় চ্যানেলগুলোর বাংলাদেশে অবাধে সম্প্রচার চললেও সে দেশে এই দেশের চ্যানেলের সম্প্রচার নেই।

এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময় দেশটির সঙ্গে আলোচনা করেছেন জানিয়ে একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা আশা করছি, ভারতে আমাদের চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার চালু হবে।

এদিকে, রোববার বাংলাদেশে সব ধরনের ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে সরকারকে উকিল নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। সম্প্রচার বন্ধ না করা হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে তথ্যমন্ত্রী, তথ্যসচিব ও বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

সামাজিক অবক্ষয়ের অভিযোগে বাংলাদেশে ভারতীয় সব টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের দাবি জানিয়ে সোমবার সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কপিরাইট বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছে।

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ০৫, ২০১৪)