স্পোর্টস ডেস্ক : দুজনের ব্যাটিংয়ের ধরনটা খুব কাছাকাছি। ইনিংসের প্রথম বল থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হওয়ার সহজাত গুণটাও রয়েছে দুজনের মধ্যে। সাদা পোশাকের টেস্ট ক্রিকেটেও ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ের জন্য বিশেষ পরিচিত দুজনেই। তবে দুজনের মধ্যে সিনিয়র যিনি অর্থাৎ ভারতীয় ওপেনার ভিরেন্দর শেবাগ এ কাজটা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের অনেক আগে থেকেই শুরু করে গিয়েছেন।

বলা ভালো, শেবাগের কাছ থেকেই টেস্ট ক্রিকেটেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ফর্মুলাটা পেয়েছিলেন ওয়ার্নার। এটি কোনো যেনোতেনো মন্তব্য নয়, খোদ ওয়ার্নারই জানিয়েছেন এমন তথ্য। ক্যারিয়ারের শুরুতে অসি ওপেনার নিজেকে শুধু টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট ভাবলেও, শেবাগের পরামর্শেই মূলত টেস্ট ক্রিকেটেও দুর্দান্ত খেলতে শুরু করেন ওয়ার্নার।

শনিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যাডিলেইড টেস্টে ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন ওয়ার্নার, অপরাজিত ছিলেন ৩৩৫ রানে। যা কি না দিবারাত্রির টেস্টে যেকোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে বড় ব্যক্তিগত ইনিংস আছে মাত্র ৬টি।

এমন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলার পর ওয়ার্নার প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি শেবাগকে। কেননা আইপিএল খেলতে গিয়ে ভারতের সাবেক ওপেনারের পরামর্শেই টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করেছিলেন তিনি।

নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে শেবাগের অবদানের কথা উল্লেখ করে ওয়ার্নার বলেন, ‘শুরুতে আমি অনেকটা গিনিপিগের মতো ছিলাম। যে কি না উইকেটে গিয়ে নিজের ইচ্ছেমত খেলে চলে আসতো। পরে আমি যখন দিল্লির হয়ে আইপিএল খেলতে গেলাম, তখন শেবাগের সঙ্গে দেখা হয়। শেবাগ আমাকে নিয়ে আলাদা করে বসে।’

‘তখন সে আমাকে বলে যে, আমি চাইলেই টি-টোয়েন্টির চেয়ে ভালো টেস্ট ব্যাটসম্যান হতে পারবো। এ কথা শুনে আমি উল্টো ওকে বলছিলাম, তোমার মাথা ঠিক আছে তো?’

ওয়ার্নারের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়েও উৎসাহে ভাটা পড়েনি শেবাগের। বরং বুঝিয়েছেন কীভাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মারকাটারি ব্যাটিংটা টেস্ট ক্রিকেটেও করা যায়। ওয়ার্নার বলেন, ‘তখন শেবাগ আমাকে প্রতিনিয়ত বলতো, টেস্ট ক্রিকেটে বেশ কয়েকজন থাকবে স্লিপ এবং গালিতে। কভার অঞ্চল খালি, একজন হয়তো থাকে মিড উইকেটে। এছাড়া মিড অন এবং মিড অফও থাকে কাছে। এ অবস্থায় তুমি যদি নিজের খেলাটা খেলতে পারো, তাহলে তো যেকোনো দিন উড়ন্ত সূচনা পাবে। এরপর নিজেকে সামলে নিলে বড় ইনিংসও খেলতে পারবে।’

‘শেবাগের এ কথাগুলো সবসময় আমার মাথায় কাজ করে। আমরা যখন এসব বিষয়ে কথা বলছিলাম, তখন মনে হচ্ছিলো টেস্ট ক্রিকেট খুবই সহজ। আমার মনে হয় শুরুর দিকে আমি শুধু একভাবেই খেলতাম এবং নিজের স্টাইল বদলাতে চাইতাম না। ম্যাচের অবস্থা বুঝে ব্যাটিংয়ের গিয়ার পরিবর্তনের বিষয়টাও ঠিকভাবে করতে পারতাম না।’

ওয়ার্নারের শেষ কথা, ‘তবে এখন ক্রিকেট অনেক এগিয়েছে, আধুনিক হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য আমাকেও অনেক কিছু শিখতে হয়েছে। আগে হয়তো আমি শুধু একভাবেই ব্যাট করতে পারতাম। তবে সম্প্রতি বিশেষ করে শেষ দুই টেস্টে আমি মনে করি জীবনের সেরা ব্যাটিংটা করছি। এর চেয়ে বেশি ধৈর্য নিয়ে কখনও খেলিনি।’

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০১৯)