স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙার কার্যক্রম নিয়ে ফের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য দরপত্র আহ্বান করার পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভবনটি ভাঙতে কাজ পেয়েছিল সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের দরপত্র ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার। সে অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ায় মেসার্স সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। যদিও শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নিয়েছে রাজউক।

তারা এ ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে আসার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ফোর স্টার গ্রুপকে কাজটি দেয় রাজউক। ফোর স্টার গ্রুপের দরপত্র ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকার। এই টাকার বিনিময়ে ভবনটির সব মালামাল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাওয়ার কথা।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয় নিয়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ওই ভবন থেকে লিফট, এসিসহ মূল্যবান সব সামগ্রী নিয়ে যেতে দেয়ার কারণে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়। এখন যেহেতু লিফট, এসিসহ অনেক মূল্যবান সামগ্রী নেই, সে কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগে তাদের দেয়া দর কমানোর দাবি জানাচ্ছে। কিন্তু রাজউক বলছে, দর কমানো সম্ভব নয়। প্রয়োজনে পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে। যে কারণে ভবন ভাঙার বিষয়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ আগের দর কমিয়ে নেয়ার দাবি করছে। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। সব ঠিকঠাক থাকলে তাড়াতাড়ি বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু করতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকেরে এক কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু বিজিএমইএ ভবন থেকে লিফট, এসিসহ মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়েছে, তাই তারা বলছে কাজের দাম কমাতে। তা না হলে তারা কাজ করবে না। যদি দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা বা কোনো সিদ্ধান্ত না হয় তাহলে রাজউক আবার নতুন করে দরপত্র আহ্বান করবে। সে ক্ষেত্রে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হতে আরও দেরি হতে পারে।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিলের মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে সময় দিয়েছিলেন আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সময় পার হওয়ার পর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ১৬ এপ্রিল মাঠে নামে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

বিজিএমইএ ভবনে অভিযানে আসে রাজউক। প্রথম দিনই ভবনে থাকা বিভিন্ন অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সুযোগ দিয়ে পরে ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়। পরে অবশ্য আরও কয়েক দফা সুযোগ দেয়া হয় মালামাল সরানোর জন্য।

২০০৬ সালের দিকে হাতিরঝিলে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিজিএমইএ ভবন অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয় গত ১২ এপ্রিল। গত বছরের ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএকে এক বছর ১০ দিন সময় দেন।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটি ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। এরপর ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০১৯)