তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : মঙ্গলবার কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দু'দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড (আইজেএসও)-এর ১৬তম আসর। যেখানে অনূর্ধ্ব ১৬ বছর বয়সীদের মেধার এ লড়াইয়ে বিশ্বের ৬৯টি দেশের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে।

বিজ্ঞান-মেধার এ বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে সারাদেশ থেকে বাছাইকৃত সেরা ছয় শিক্ষার্থী। তারা হলেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজের মুহতাসিন আল ক্বাফি, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের অভিষেক মজুমদার সন্তু, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের কাজী তাসফিয়া জাহিন, ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের জাকিয়া তাজনূর চৌধুরী দিয়া, ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের জুহায়ের মাহদিউল আলম আশফি এবং গ্রীন ফিল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আহমেদ আল-জুবায়ের আনাম।

আজ কাতারের দোহার উদ্দেশে রওনা দেবেন বাংলাদেশ দল। ৩ ডিসেম্বর উদ্বোধনী পর্বের মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড ২০১৯।

বাংলাদেশ দলের সদস্যদের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. রেজাউর রহমান বাংলাদেশ দলের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

তিনি দলের সদস্যদেরকে নানা পরামর্শ দেন এবং ভালো ফলাফলের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উপস্থিত ছিলেন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এ বছরের দলকে অনেকগুলো ধাপে বাছাই করা হয়েছে। এই দলটি সারাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। বিজয়ের মাসে দলটি আমাদেরকে একটি ভালো ফলাফল এনে দিবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী মাহমুদ করিম, ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান জনসংযোগ কর্মকার্তা জালাল আহমেদ, বাংলাদেশ দলের দলনেতা প্রফেসর ফারসীম মান্নান মোহাম্মাদী ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী।

বাংলাদেশ দলের সদস্য জাকিয়া তাজনূর চৌধুরী দিয়া বলেন, ‘অনেকগুলো ক্যাম্পের মাধ্যমে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। বিজয়ের মাসে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পেরে আমরা গর্বিত। আমরা বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ব্যাপারে আশাবাদী।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছয় সদস্যের বাংলাদেশ দলের এ বাছাইপর্ব শুরু হয় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক পর্বের মধ্য দিয়ে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, দিনাজপুর ও নেত্রকোনা এই আটটি অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয় আঞ্চলিক বাছাইপর্ব। এছাড়া প্রথমবারের মতো একটি স্কুল বা আশপাশের কয়েকটি স্কুলের সমন্বয়ে ৭টি অঞ্চলে আয়োজন করা হয় স্কুল অলিম্পিয়াড। এবারও অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় একটি ই-অলিম্পিয়াড। যেখানে সারাদেশ থেকে অংশ নেয় প্রায় ২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। আঞ্চলিক পর্ব, স্কুল অলিম্পিয়াড ও ই-অলিম্পিয়াডে অংশ নেয় প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী। এদের মধ্য হতে বিজয়ী ৬০০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় ৫ম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্বে।

৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এই জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে। জাতীয় পর্বে বিজয়ী হয় ৫২ জন। জাতীয় পর্বের সকল বিজয়ীকে নিয়ে ১১-১৩ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় ৫ম বিডিজেএসও ক্যাম্প। ক্যাম্পের ফলাফল বিবেচনা করে বাছাই করা ১৩ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৪-১৭ সেপ্টেম্বর ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশের ডর্মেটরিতে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয় বিডিজেএসও এক্সটেনশন ক্যাম্প। এরপর ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত টিম সিলেকশন টেস্টের ফলাফল ও তাদের পারফরম্যান্স বিবেচনা করে ঘোষণা করা হয় ছয় সদস্যের বাংলাদেশ দল। এই দলই অংশ নেবে কাতারের দোহায় অনুষ্ঠেয় ১৬তম আইজেএসও-তে।

সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বাংলাদেশ দলকে। ভলান্টিয়ারস অ্যাসোসিয়েশন ফর বাংলাদেশ ও আপন উদ্যোগ ফাউন্ডেশনের ডরমিটরিতে তিন ধাপে মোট ২১ দিনের আবাসিক ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মাকসুদুল আলম বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি (ম্যাসল্যাব)-এ আয়োজিত হয় তিন দফায় ১৫ দিনের অনাবাসিক ক্যাম্প। ল্যাবরেটরি ক্লাসগুলো অনুষ্ঠিত হয় ম্যাসল্যাবে। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ১০০ ঘণ্টার বেশি থিওরি ক্লাস, ৫০ ঘণ্টার বেশি ল্যাবরেটরি ক্লাস ও প্রায় ৭০ ঘণ্টার প্রশ্ন সমাধান ক্লাসে অংশ নেয় ১৬তম আইজেএসও-তে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের ছয় সদস্য। ক্লাসগুলো পরিচালনা করেন বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের ট্রেইনাররা।

আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জন্য বাংলাদেশ দল নির্বাচন করে যৌথভাবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০১৯)