রূপক মুখার্জি, নড়াইল : আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নড়াইল জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। নড়াইল শহরের কড়িগ্রাম সুলতান মঞ্চ চত্বরে জেলা আ’লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস’র সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু’র পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। 

উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য পীযুশ কান্তি ভট্টাচার্য। সম্মেলন সফল করতে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে জেলার দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্য রকম উৎসাহ উদ্দিপনা কাজ করছে। কেন্দ্রিয় সম্মেলনের আগেই নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে।

সে কারণে সভাপতি-সাধারণ সম্পাকের পদ পেতে তৎপর হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় সমর্থকদের নিজের পক্ষে ভেড়াতে প্রার্থীদের সরব পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা জেলা। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মিদের কদর বেড়ে গেছে। সেই সাথে দলের সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে অন্যরকম উৎসাহ উদ্দিপনা বিরাজ করছে। কেন্দ্রিয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্র্থীরা শহরের প্রতিটি সড়কে নির্মাণ করেছেন সুদর্শণ তোরণ। টানিয়েছেন ব্যানার ফেস্টুন। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে পোষ্টার। দলীয় সূত্রে জানাগেছে, ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সুলতান মঞ্চেই নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস কে দ্বিতীয়বারের মত সভাপতি ঘোষনা করা হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে নিজাম উদ্দিন খান নিলু’র নাম ঘোষনা করা হয়। ২০২০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সম্মেলন হওয়ার কথা থাকায় নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে চলছে অন্য রকম হিসাব নিকাশ। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কে হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক ? জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস কি তৃতীয় বারের মত সভাপতি হিসেবে হ্যাট্টিক করছেন ? না-কি সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলুকে স্বপদে বহাল রেখে অন্য কাউকে সভাপতির দ্বায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। না-কি বর্তমান কমিটিই বহাল থাকবে ? এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন।

সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জিন্নাহ, সহ-সভাপতি মোল্যা ইমদাদুল হক, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট গোলাম নবী, সাবেক জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস।

সাধারণ সম্পাদক পদে যারা নিজেদের প্রার্থীতার কথা প্রকাশ করেছেন, তারা হলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান নিলু,জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মোঃ হাসানুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, আ’লীগ নেতা রাশিদুল বাশার ডলার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ্যাডভোকেট কাজী বশিরুল হক।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী ক্ষোভের সাথে জানান, নড়াইলের কিছু নেতা আছে,যাদের সারা বছর পাওয়া যায় না। দলীয় কর্মসূচীতে ডাকলেও আসেন না। কিন্তু সম্মেলনের কথা শুনলে, কমিটি করার কথা শুনলে তাদের মাথায় কাজ করে না। দলীয় পদ পেতে সব ধরনের তৎপরতা চালান। যে কোন ছোট কাজ করতেও তাদের বিবেকে বাঁধে না। তৃণমূলের ভোট ও মনোনয়ন ছাড়াই কেন্দ্রিয় নির্দেশে কমিটি ঘোষনা করা হবে, এমন সিদ্ধান্তের কথা জেনে কতিপয় নেতা ঢাকায় গিয়ে উঠেছেন। জনবিচ্ছিন্ন ওইসব নেতারা লবিং গ্রুপিং সহ জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন পদ পেতে। একই সাথে দলের ত্যাগী নেতাদের বিরূদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত আছেন। এরা দলের জন্য জামায়াত-বিএনপি থেকেও ভয়ংকর। এদের কাজ দল হতে সুবিধা নেয়া। দলের পদ ভাঙ্গিয়ে টাকা কামাই করা। এসব নেতাদের কাউকে পদে দিলে দল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে মন্তব্য করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর কবীর সিকদার ক্ষোভের সাথে বলেন, তিনি বিগত কমিটি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালের কাউন্সিলে তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হন। অথচ তিনি জেলা আ’লীগের একজন সদস্য হতে পারেননি। যারা কমিটি’র নেতৃত্বে আসেন তারা দলের জন্য বিশেষ কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। তবে নিজেদের স্বার্থ সুবিধার জন্য যা যা করার দরকার তাই তাই করেছেন। সে কারণে আগামী ৩ ডিসেম্বর জেলা আ’লীগের সম্মেলনে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করে প্রার্থীদের বায়োডাটা দেখে এবং অতীত ইতিহাস জেনে পদ দিলে দল শক্তিশালী হবে বলে তিনি জানান।

বিগত দিনে যারা দ্বায়িত্ব পেয়েছেন, তারা দলের চেয়ে নিজের স্বার্থ বড় করে দেখেছেন। এতে দল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দলের মধ্যে গ্রুপিং, অভ্যন্তরীন কোন্দল বেড়েছে। ভিন্নমত পোষন করে জেলা আ’লীগের নেতা হাফিজ খান মিলন বলেন, বর্তমান জেলা আ’লীগের কমিটি ইতোপূর্বের সকল কমিটি হতে বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর। এ কমিটি গঠনের পর দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল অনেক কমেছে। সবাইকে এক প্লাটফরমে এনে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন বর্তমান নেতৃবৃন্দ। দলের মধ্যে শৃংখলা ফিরে এসেছে।

জেলা আ’লীগ নেতা সালাহ উদ্দিন বশির ও অহিদুজ্জামান অহিদ চলমান এ কমিটির ভূয়সী প্রশংসা করে এ কমিটিকে বহাল রাখার দাবি জানিয়ে বলেন, বর্তমান কমিটি অতীতের সকল কমিটি অপক্ষো বেশি কার্যকর। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দল পরিচালনা করেছে। নেতা-কর্মীদের পাশে থেকে সততার সাথে কাজ করেছে। তাদের সফল নেতৃত্বের কারনে ইউপি নির্বাচনে জেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে আ’লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে।

তৃণমূল পর্যায়ে দল শক্তিশালী হয়েছে। আগামী জেলা কমিটিতে দলের সৎ ও ত্যাগি নেতাদের দিয়ে কমিটি করার দাবি জানিয়ে জেলা আ’লীগ নেতা আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বপন বলেন, অনেক নেতা অবমূল্যায়নের কারনে নেতৃত্ব থেকে দূরে আছেন। তাদের মনে অনেক দুঃখ,ব্যথা ক্ষোভ আছে। তাদেরকে যোগ্যতা অনুযায়ী পদে দিলে জেলা কমিটি বেশি কার্যকর হবে। আর এ কাজ করতে হলে অবশ্যই কর্মী বান্ধব নেতাদের জেলার সভাপতি ও সম্পাদক করতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে,কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা নির্বাচন হবে না। তাই পদ প্রত্যাশীদের কাছে কাউন্সিলর এবং নেতা-কর্মী কদর একটু কম। পদপ্রার্থীরা পদ পেতে কেন্দ্রিয় নেতাদের পিছনেই বেশি ছুটছেন বলে জানান স্থাণীয় দলীয় কর্মীরা। জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নড়াইল পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সমর্থন পেয়ে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। দলের একজন ত্যাগি নেতা হিসেবে তিনি মনে করেন তাকে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হবে। তবে দল যাকেই নেতৃত্ব দিবে তিনি তাকে মেনে নিবেন বলে জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, গত সম্মেলনে তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। পদ না পেলেও তিনি দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশাবাদি দল সঠিক মূল্যায়ন করে তাকে এবার সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব দিবে। স্থানীয় আ’লীগের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, গত সম্মেলনেই তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়ার সম্ভবনা ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি হতে পারেন নি। তাই এবার হয়তো তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদটি দেয়া হতে পারে। তাছাড়া তিনি শেখ পরিবারের পরম আত্মীয়। তাই নির্ভরযোগ্য লোক হিসেবে তাকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি দেয়া হতে পারে। তাছাড়া তার পক্ষে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের একঝাক তরুন নেতা-কর্মী। তারা কেন্দ্রিয় নেতাদের কাছে জোর দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘ দিনের ত্যাগি ও বলিষ্ঠ নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ হাসানুজ্জামানের জন্য।

তার পক্ষীয় নেতা-কর্মীদের দাবি দলের সকল কর্মসূচীতে তিনি সক্রিয় অংশ গ্রহন করেন। প্রতিটি মিছিল ও সমাবেশে তিনি সর্বোচ্চ লোকবল দেন ও আর্থিক সহযোগিতা করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে যারা প্রার্থী হয়েছেন সব দিকদিয়েই তিনি সেরা। এ প্রতিদ্বন্দিদের মধ্যে তিনি উচ্চ শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত বংশীয়, সৎ নীতিবান ও কর্মী বান্ধব। নেই কোন কালো টাকা। বৈধ পথেই তিনি অঢেল সম্পদ ও সম্পত্তির মালিক। নড়াইল পৌরসভার মাছিমদিয়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহি মোল্যা বংশের এ মানুষটি জেলার সর্বত্রই একজন বিশিষ্ট ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত। জনপ্রিয় এ নেতা সদা হাস্যোজ্জ্বল ভাবে নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলেন। নেতা-কর্মীদের সকল বিপদে ঝাপিয়ে পড়েন।

দুর্নীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি মুক্ত এ নেতাকে নড়াইল জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হলে জেলার রাজনীতিতে সুবাতাস ফিরবে। দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল নিরসন হবে। দলের ত্যাগি ও সৎ নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন হবে। যারা ক্ষোভে,দুঃখে দল থেকে দূরে সরে আছে, তারা আবার শান্তিপূর্ণ ভাবে দল করতে পারবে। তাই দলের দূর্দিনের কান্ডারী মোঃ হাসানুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

কয়েকজন নেতা জানান, প্রার্থীদের মধ্যে এমন দু’একজন আছেন, যারা দলের জন্য কিছু করেন না। দল ভাঙ্গিয়ে চলেন। দল ভাঙ্গিয়ে অবৈধ পথে কোট কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তারা টাকার জোরে নেতা হতে চান। কিন্তু মোঃ হাসানুজ্জামান একেবারেই ব্যতিক্রম। তিনি জনগনের দোয়া ভালোবাসা, সমর্থন ও দলীয় সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা নিয়ে নেতা হতে চান। ওইসব নেতাদের সাথে মোঃ হাসানুজ্জামানের পার্থক্য এখানে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গ্রহনযোগ্য হিসেবে তাকেই সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনীতিকরা।

জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, বিগত সকল সময়ের চেয়ে তিনি সফল ভাবে জেলা আওয়ামী লীগ পরিচালিত করেছেন দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে। দলের প্রতিটি কর্মসূচী সফল ভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি আশাবাদি তার সকল অতীত কর্মকান্ড পর্যালোচনা করে তাকে স্বপদে বহাল রাখা হবে।

জেলা আ’লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি বিগত কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে দলীয় নেতা-কর্মীদের মতামতের মূল্যায়ন করে দল পরিচালনা করেছেন। দলের জন্য অনেক জেল জুলুম সহ্য করেছেন। দলের দুর্দিনে নেতা-কর্মীদের নিয়ে রাজপথে থেকেছেন। দীর্ঘ রাজনৈতীক জীবনে তাঁর অবদানের প্রতিদান স্বরূপ তাকে সভাপতি পদে দেয়া হবে বলে তিনি আশাবাদি।

স্থানীয় আ’লীগের একাধিক নেতা জানান, এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ আলী প্রখর মেধা সম্পন্ন ঠান্ডা মাথার রাজনীতিক। তিনি কেন্দ্রিয় নেতাদের মাধ্যমে দলীয় সভানেত্রীকে ম্যানেজ করে সভাপতির পদটি বাগিয়ে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সাবেক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট গোলাম নবী জানান,তিনি দলীয় সভানেত্রী’র সাথে দেখা করে জেলা আ’লীগের সভাপতি’র দ্বায়িত্ব নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দিয়ে এসেছেন বায়োডাটা। চ্যালেঞ্জ করে এসেছেন অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় তিনি অনেক সৎ ও ত্যাগি নেতা।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেই বলছেন তিনি নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজার নিকট আত্মীয়। তাই সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্তজা যদি তার পক্ষে সুপারিশ রাখেন, তা-হলে তার জন্য জেলা আ’লীগের সভাপতি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। জেলা আ’লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দ্বায়িত্ব পালন করায় এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সমর্থন থাকায় তিনি দ্বিতীয় বারের মত সভাপতি হন। আবারও তার কর্মকান্ডের মূল্যায়ন করে তৃতীয় বারের মত জেলা আ’লীগের হাল ধরার সুযোগ দেয়া হবে বলে তিনি মনে করেন। তাছাড়া তিনি দাবি করেন জেলা পরিষদ’র দ্বায়িত্ব পালনকালে কোন দুর্নীতি অনিয়ম করেননি। তিনি দলের সভাপতি’র পদে থেকে সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু কে নিয়ে দলের প্রতিটি কর্মসূচী সফল ভাবে বাস্তবায়ন করেছেন।

দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বার্থের পরিপন্থি কোন কাজ করেননি। দলের মধ্যে শৃংখলা ফিরিয়ে এনেছেন। সে হিসেবে তাদের দু’জনকেই আবার পুনর্বহাল করা হতে পারে। এদিকে সম্মেলন সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরোও জানা গেছে, সম্মেলনে প্রধান বক্তা থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। বিশেষ বক্তা থাকবেন নড়াইল-১ আসনের সাংসদ কবিরুল হক মুক্তি ও নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মোর্তজা।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন ও পারভীন জামান কল্পনা। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

এদিকে দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে একসাথে পথ চলার অবসান ঘটেছে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের। গত পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন পাওয়া এবং নির্বাচনী বৈতরনি পার করায় জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন নিজামউদ্দিন খান নিলু। বলা যায়, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলুর সার্বিক সহযোগিতা নিয়েই জাহাঙ্গীর বিশ্বাস মেয়র হন। তাই এ নির্বাচনের পরে তাদের বন্ধন আরো শক্তিশালী হয়।

কিন্তু সম্প্রতি হয়ে যাওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক পান নিজামউদ্দিন খান নিলু। তার বিপক্ষে নির্বাচনে নামেন নড়াইল পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের সহদর বিপ্লব বিশ্বাস বিলো। শুধু প্রার্থী নয়, মূল প্রতিন্দন্দ্বী হয় তার সাথে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে সল্পভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নিজামউদ্দিন খান নিলু। এ নির্বাচনে নিজামউদ্দিন খান নিলুর বিপক্ষে বিলো বিশ্বাস প্রার্থী হওয়ায় বিজয় ছিনিয়ে আনতে নিজামউদ্দিন খান নিলুর বেশ বেগ পেতে হয়। যদিও প্রকাশ্যেই মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস আপন ভাইয়ের বিরোধিতা করে নিজামউদ্দিন খান নিলুর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তদুপরি এ নির্বাচনে বিলো বিশ্বাসের প্রার্থী হওয়াকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেন নি নিজামউদ্দিন খান নিলু ও তার পক্ষীয় নেতাকর্মীরা।

নির্বাচনকালীন সময়ে চুপ থাকলেও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ভাবে এ ঘটনায় ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটান। এমনকি মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাসকে সন্দেহের চোখে দেখেন বলে গুঞ্জন ওঠে। এ নিয়ে বর্ষীয়ান এ দু’নেতার মধ্যে টানাপোড়েন চলতে থাকে। যার চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আগামীকালকের জেলা আওয়ামীলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। দু’জনই জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। দু’জনের মধ্যে চলছে স্নায়ু যুদ্ধ। সম্মেলনের দিন সম্মেলনের মাঠ দখল দিয়ে দু’গ্রুপে সংঘর্ষ হতে পারে। এমনকি জনশক্তি প্রদর্শন নিয়ে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব ফ্যাসাদ হতে পারে। সম্মেলনে আসার পথে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বাঁধা দিতে পারে। উভয় পক্ষের সমর্থকদের মথ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এ দ’জনের দ্বন্দ্বে সাধারণ নেতা-কর্মীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। কার পক্ষে অবস্থান নিবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এ দু’জনের দ্বন্দ্বের কারনে সুবিধাজনজক অবস্থানে আছেন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলিষ্ঠ নেতা মোঃ হাসানুজ্জামান। জেলার অধিকাংশ নেতা-কর্মী তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা মোঃ হাসানুজ্জামানের পক্ষে জোরালো আওয়াজ তুলবেন। সে হিসেবে রাজনৈতীক বিশ্লেষকদের ধারনা অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতা মোঃ হাসানুজ্জামানের নাম সাধারণ সম্পাদক পদে ঘোষনা হতে পারে।

(আরএম/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০১৯)