স্টাফ রিপোর্টার : বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে হরতাল কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ভবনে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে গণশুনানি চলাকালে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সিপিবি ও বাসদ নেতারা। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে তারা এ কথা জানান।

জানা গেছে, বিদ্যুতের দাম বাড়াতে তিন দিন ধরে গণশুনানি করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। টিসিবি ভবন অডিটোরিয়ামে ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া গণশুনানি আজ (৩ ডিসেম্বর) শেষ হবে।

গণশুনানি চলার সময় মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার কিছু পর পর্যন্ত টিসিবি ভবনের নিচে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সিপিবি ও বাসদ। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।

সমাবেশে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়লে সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি দেব। হরতাল, অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বাধ্য করব বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তা শুধু বিদ্যুতের মধ্যে থেমে থাকবে না। সব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। কারখানার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, কৃষকের সেচের খরচ বেড়ে যাবে। সব ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বাড়লে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. শাহ আলম বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনারা যে দলই করুন না কেন, যেকোনো কর্মসূচির জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসায়ীদের সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। সেখানে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করা যাবে না। শেয়ার মার্কেট লুট করছে যারা, বিদ্যুৎ লুট করছে যারা, পরিবহনের মাফিয়া যারা, এরাই তো সংসদে। তারা কী তাদের স্বার্থ ছেড়ে আমার-আপনার জন্য আইন করবে? বিদ্যুতে যারা লুট করছে, তারা কি গ্রাহকের পক্ষে আইন করবে? করবে না।’

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন একটা প্রহসন মন্তব্য করে শাহ আলম বলেন, ‘তারা আমাদের সঙ্গে তামাশা করে। আমাদের চোখে ধুলা দেয়ার জন্য এরা এখানে বসে। জনগণের পক্ষে তাদেরকে কোনো রায় দিতে দেখিনি। সাংবিধানিক এ রেগুলেটরি কমিশন দখলে নিয়েছে সরকার।’

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না যদি সিস্টেম লসের নামে যে চুরি, ডাকাতি বন্ধ হয় বলেও জানান তিনি। শাহ আলমের বক্তব্য, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি হচ্ছে। এর আগে বহুবার গণশুনানি হয়েছে। গণশুনানিতে গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। গণশুনানিতে কোনো সময় সমন্বয় করার কথাও বলা হয়। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানে সমন্বয়ের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে এখানে দাম কমানোর জন্য সমন্বয়ের কোনো সভা হয় না। কোনো গণশুনানি হয় না। এ থেকে বোঝা যায়, শুধু দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানির কথা বলেন তারা।’

সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘ভেতরে শুনানি চলছে, বাইরে আমরা বিক্ষোভ করছি। এ বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যেকোনো চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র আমরা প্রতিরোধ করব। প্রতিরোধের জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।’

রেন্টাল, কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। কুইক রেন্টাল বন্ধ করতে হবে। লুটেরাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর দাবিও করা হয় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯)