মাওয়া প্রতিনিধি : স্বজনদের অভিযোগ কেবল‘অবহেলার’ কারণেই এখনো পদ্মায় নিখোঁজদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধার তৎপরতায় নিখোঁজদের স্বজনরা যেন নদী তীরে ফুঁসছেনে।এদিকে লঞ্চডুবির ২৪ ঘণ্টা পর মেঘনায় ভেসে উঠতে শুরু করেছে লাশ।

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মাঝেরচর এলাকায় আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই লাশ ভেসে ওঠেছে। চাঁদপুর পুলিশ সুপার এ কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে লাশের পরিচয় মেলেনি।লাশ দুটি লঞ্চডুবির ঘটনার নিখোঁজ যাত্রীদেরই বলে ধারণা করা হচেছ। স্ত্রোতের টানে লাশ দুটি মেঘনায় ভেসে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

লঞ্চডুবির পর থেকে শত শত স্বজন মাওয়া ও কাওড়াকান্দি ঘাটে জাড়ে হয়েছে। রাতভর স্বজনরা সেখানে ভির করেন।তবে উদ্ধার অভিযানে চরম গাফিলতির অভিযোগে নিখোঁজ লঞ্চ যাত্রীদের স্বজনরা নদী তীরে যেন ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। মাঝে মধ্যেই কান্নায় রোল পড়ে যায়।

লঞ্চডুবির পর এক দিন পেরিয়ে গেলেও নৌযানটির অবস্থান সনাক্ত না হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে জরিপ-১০ নামের একটি ‘সার্ভে ভেসেল’ ডেকে আনা হচ্ছে। এদিকে রুস্তমের সঙ্গে মঙ্গলবার সকালে অভিযানে যোগ দিয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক।

তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে সোমবার বেলা ১১টার দিকে পদ্মায় ডুবে যায় যাত্রী পারাপরের লঞ্চ এমএল পিনাক-৬।

দুর্ঘটনার পর স্পিডবোটের মাধ্যমে শতাধিক যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। নদী থেকে উদ্ধার করা হয় চারটি লাশ।

স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে ১১৮ জন নিখোঁজ যাত্রীর একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল।

এদিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘোলা পানির কারণে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি সনাক্ত করতে পারছে না নৌবাহিনীর স্ক্যানার যন্ত্র। চট্টগ্রাম থেকে আনা হচ্ছে জরিপ-১১ জাহাজ।

এই মুহূর্তে দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে আছে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম। এ অবরোধের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী কয়েকশ’ বাস-ট্রাক ঘাটে আটকা পড়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

অবরোধকারীরা স্লোগান তুলছেন, উদ্ধারকাজে ধীরগতির প্রতিবাদে ‘অবরোধ চলছে, চলবে’।

সরকারি হিসাবে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত মাত্র দুজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এঁদের একজন মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাদিপুর এলাকার নূসরাত জাহান হিরা (২১)। তিনি শিকদার মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। অপরজনের পরিচয় মেলেনি। শতাধিক জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। গত রাত ১২টা পর্যন্ত আরও অন্তত ১২৫ জনের পরিবার তাঁদের স্বজন নিখোঁজ হয়েছেন দাবি করে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছে নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।

তবে উত্তাল নদীতে এখন পর্যন্ত পিনাক-৬ এর অবস্থান সনাক্ত করতে না পারায় উদ্ধার অভিযানে কার্যত কোনো অগ্রগতি নেই। উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে নদীতে প্রচুর পলি আর বালি থাকে বলে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও ধীরে ধীরে কমে আসছে।

তারা বলছেন, যতো বেশি সময় পার হবে, স্রোতের টানে নদীর তলদেশে বহুদূর সরে যাবে ডুবে যাওয়া লঞ্চ। আর সেটি কোথাও আটকে গেলে দ্রুত পলির নিচে ঢাকা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে লঞ্চটির অবস্থান সনাক্ত করা বা লাশ উদ্ধার কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

এই পরিস্থিতিতে দ্রুত লঞ্চটি সনাক্ত করতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জরিপ-১০ নামের একটি বিশেষায়িত নৌযান আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।

সকালে মাওয়া ঘাটে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “গতকাল থেকে লঞ্চটিকে ট্রেস করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু আপনারা তো দেখছেন নদীর অবস্থা। যে জায়গায় লঞ্চটি ডুবেছিল, সেখান থেকে দূরে সরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এছাড়া স্রোতের কারণে পলির তলায় তলিয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। ”

মন্ত্রী বলেন, জরিপ-১০ নদীর ২৫০ মিটার গভীরেও অনুসন্ধান চালাতে পারে। জাহাজটি পৌঁছালে উদ্ধার তৎপরতা আরো গতিশীল হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

(ওএস/এটিআর/অাগস্ট ০৫, ২০১৪)