চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়া রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আসছে নতুন নতুন রোগি। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। দিনের দিনের পর দিন নতুন নতুন এলাকার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ, বিজিবি ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা একযোগে আক্রান্ত এলাকায় কাজ করছে।

আক্রান্ত রোগিদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ পৌরসভার পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানি পান করে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় পৌর কর্তৃপক্ষ পাইপ লাইনের পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। সেইসাথে টিউবওয়েলের পানি ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সদর হাসপাতালে আসা ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা ৭০০ ছাডিয়ে গেছে। আরো নতুন নতুন রোগি আসছে। ১০০ শয্যার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগির স্থান সংকুলান হচ্ছে না। হাসপাতালের বারান্দায় রোগি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসি ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মসজিদ পাড়া, মাঝেরপাড়া, মাস্টারপাড়া, পুরাতনপাড়া, ইসলামপাড়া ও বাগানপাড়ার বাসিন্দারা পৌরসভার সরবরাহ করা পানীয় পানি পান করে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়েছে এ অবস্থা। আকান্তরা সকলেই চুয়াডাঙ্গা শহরের মসজিদপাড়া, বাগানপাড়া, ইসলামপাড়া, মাস্টারপাড়া, মল্লিকপাড়া, ও মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে উপজেলা হাসপাতালগুলো থেকে নার্সসহ অন্যান্য লোকবল নিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। হাসপাতালের রোগি ওয়ার্ড ছাড়াও অন্যান্য অফিস কক্ষগুলোও ডায়রিয়া রোগিদের জন্য ছেড়ে দিতে হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক আনোয়ার জাহিদ বলেন, বিজিবির উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ইতিমধ্যেই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগি রাখার জন্য তাবু টাঙানো হয়েছে। হাসপাতালে রোগির চাপ আরো বেড়ে গেলে আক্রান্তদের যাতে হাসপাতালের সামনে টাঙানো তাবুতে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা যায় সেজন্যই এ উদ্যোগ নিয়েছে বিজিবি। বিজিবির এসব কাজ তদারক করছেন অতিরিক্ত পরিচালক আনোয়ার জাহিদ ও মেডিকেল অফিসার উপ-পরিচালক দানিয়াল রাব্বি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাসুদ রানা জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৫-৬টি মহল্লার বাসিন্দারা ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। শুক্রবার রাত থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগি আসা শুরু হয়। প্রতিদিনই রোগি বাড়ছে। হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের মেঝে ও ডাক্তারদের সম্মেলনকক্ষ রোগিদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, শহরে মাইকিং করে জনসচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। পৌরসভা থেকে সদর হাসপাতালে অতিরিক্ত সুইপার সরবরাহ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। এজন্য পৌরসভার সরবরাহ করা পানি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পানি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে এলে ডায়রিয়া প্রকোপের কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
(জেএ/এএস/আগস্ট ০৫, ২০১৪)