নওগাঁ প্রতিনিধি : উত্তরের নওগাঁ জেলায় ভোরের কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল আর সবুজ ঘাসের ডগায় ছড়িয়ে পড়া শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে, নওগাঁ জেলা চলছে, লেপ-তোষক তৈরির কাজ। গত ক’দিন থেকে এই অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। জেলা সদরসহ প্রতিটি এলাকার ধুনকররা শীত জেঁকে বসার আগেই এখন লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ঋতু বৈচিত্রে শীত মানেই প্রশান্তির ঘুমের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ঋতু। জেলা জুড়ে শীতের অনেকটা আমেজ শুরু হয়েছে। ভোররাতে হালকা ঠান্ডা আর সকালের মৃদুু শীত শীত ভাব বলে দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে শীতের আগমনী বার্তা। সেই সঙ্গে ভোরের মিষ্টি রোদে মাঠের সবুজ ঘাসের গায়ে লেগে থাকা শিশির বিন্দুর ঝলকানি শীতের সকালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে জেলাবাসীকে।

আমাদের দেশ ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শীতের আগমনী বার্তা শীত কালে হওয়ার কথা থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তা ঋতুর সঙ্গে তাল তেমনটা মিলছে না। গ্রাম বাংলায় আজও প্রবাদ আছে “এলো আশ্বিন, গা করে শিনশিন”। কিন্তু প্রকৃৃতির লীলা খেলায় কার্তিক মাসের শেষ ভাগে সকাল হলেই ঘন কুয়াশার আচ্ছন্ন আর শীতের আমেজ দেখা যায়। আবার সূর্য উঠার কয়েক ঘন্টার পরেই রোদের তাপে শীত কুয়াশা দুর হয়ে উষ্ণতা বেড়ে যায়। এদিকে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সারা রাত ধরেই মাঝারী ধরণের শীতের কারণে অনেক বাসা-বাড়িতে শীত নিবারণের জন্য হালকা কাঁথা ও কম্বল ব্যবহার শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশু ও বৃদ্ধদের শীতজনিত নানা ধরণের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।

জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কনকনে শীত জেঁকে বসার আগেই তা মোকাবিলা করার জন্য অধিকাংশ হাট বাজারের লেপ তোষকের কারিগর (ধুনকর) ও পাড়া-মহল্লার মানুষ বাড়িতে বাড়িতে লেপ-তোষক তৈরি করছে। দিন যতই গড়াচ্ছে শীত ততই বেশি পড়ায় জেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষরা নতুন নতুন লেপ তৈরি করছে। লেপ তৈরির কারিগররা শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্ডার নিলেও যথা সময়ে সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। লেপ-তোষক অর্ডার দিতে আসা মানুষের তারাহুরার কারণে নওগাঁ বাজারের শোরুমের ফাঁকা জায়গায় ক্রেতাদের উপস্থিতি আর ধুনকরদের ধুনুক দিয়ে তুলা ফাটানোর সরগরমেই যেন বলে দিচ্ছে লেপ-তোষক তৈরির ধুম পড়েছে। আগমনী শীতের কারণে তুলার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পার্শ্ববর্তী রানীনগর উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকায় ৫টি তুলার মিলে উৎপাদিত মানসম্পন্ন তুলা দোকানীদের কাছে সরবরাহ করতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি শিমুল তুলা ২শ’ ৭০ টাকা থেকে ২শ’ ৯০ টাকা, মিলের তুলা ৪৫ টাকা, কার্পাস তুলা ১শ’ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় শ্রেণী ভেদে তুলার দাম মিল মালিকরা বেশি নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কারিগরা বলছেন, আমাদের তেমন লাভ না হলেও পেশার তাগিদে এই কাজ করে আসছি।

(বিএম/এসপি/ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯)