নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় ব্যতিক্রমী সংগঠন উড়ন্তের শিল্পকর্ম বিনিময় উপলক্ষ্যে নওগাঁর একুশে পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো মনমাতানো নাচ ও গান। শনিবার সন্ধ্যায় নওগাঁর ঐতিহাসিক দুবলহাটি রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে আদিবাসী নৃত্য, দেশের গান, আধুনিক গান, সাধারণ নৃত্য। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পলাশ কুমার দাশ রচিত দুবলহাটি রাজবাড়ির ইতিকথা নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। অনুষ্ঠান দেখার জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত রাজবাড়ি প্রাঙ্গনে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে।

এছাড়াও সেখানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন, নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের উপদেষ্টা সজল চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম এম রাসেল, উড়ন্তের নির্বাহী পারচিলক সাদিয়া মিজান প্রমুখ। অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ্রগহণ করেন নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন একুশে পরিষদের সদস্য নওরীন আক্তার শারমিন। সঙ্গীত পরিবেশন করেন একুশে পরিষদের সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপুল কুমার, রাহুল, বৃষ্টি। তবলায় সহযোগিতা করেন একুশে পরিষদ নওগাঁ-র সাংস্কৃতিক সম্পাদক রণজিৎ কুমার পাল। নৃত্য পরিবেশনা করে সুনন্দা, চেরাগপুরের আদিবাসী সাংস্কৃতিক দল, সান্তাহারের দলিত সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক দল।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, একুশে পরিষদ নওগাঁর উপদেষ্টা বিন আলী পিন্টু, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক, সহ-সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন লিটন, নাইস পারভীন ও মাগফুরুল হাসান বিদ্যুৎ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিষ্ণু দেবনাথ, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আনন্দ সরকার, আবু মুসা আল হোসাইন তারিক, নাজমিন মুন্নি, কাইয়ূম হোসেন, কলেজ শাখার সহ-সভাপতি সুমন কুমার।

নওগাঁর দুবলহাটি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের একটি পরিচিত জমিদার বাড়ি। সেখানে পৃথিবীর ১০টি দেশ থেকে আগত ৩১জন শিল্পী, গবেষক ও সৃজনশীল কর্মী একত্রিত হয়েছেন নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসব্যাপী। উড়ন্ত শিল্পীগোষ্ঠীর আবাসিক শিল্পকর্ম বিনিময় কর্মসূচি অষ্টম ও নবম পর্বের কর্মকান্ডের প্রধান মিলনস্থল হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল এই ঐতিহাসিক জমিদার বাড়িটিকে ।

শিল্পীদের একটি ভিন্নধরণের সংগঠন ‘উড়ন্ত’। এই শিল্পীগোষ্ঠি শৈল্পিক ভাষায় গল্পের রুপে সমসাময়িক নানা বাস্তবতাকে উপস্থাপন করে। উড়ন্ত আবাসিক শৈল্পিক বিনিময় কর্মসূচি হচ্ছে, উড়ন্ত শিল্পীগোষ্ঠীর প্রধান বাৎসরিক কার্যক্রম। সেখানে রাজধানী শহরের বাইরে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন অজানা পুরাতন পরিত্যাক্ত ঐতিহাসিক বাড়িকে কেন্দ্র করে এক নতুুন ধরনের মঞ্চ উপস্থাপন করা হয়। যে মঞ্চে সব শ্রেণির সব মাধ্যমের শিল্পীরা একত্রিত হয়ে নিজেদের সৃজনশীলতাকে নতুন মাত্রায় প্রসার করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক শিল্পীদের সংস্পর্শে এসে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিল্পকর্মের নতুন ধারা প্রচার করতে পারবে। প্রতি পর্বে শিল্পীরা, অজানা কিংবা খুব নিকট সময়ে হারিয়ে যাবে অথবা ভেঙ্গে ফেলা হবে এমন স্থাপনা গুলোর ইতিহাস ও জড়িয়ে থাকা স্মৃৃতি গুলোর এক বিকল্প ধারার উপস্থাপনা করে থাকেন।

অবহেলা ও অযত্নে হারিয়ে যাওয়া পুরনো ঐতিহাসিক রাজবাড়িগুলোর সাথে হারিয়ে যাচ্ছে অজানা ইতিহাস। এই সম্পদগুলোর সাথে পুনরায় জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক গড়ে তুলতেও ভূমিকা রেখে আসছে ‘উড়ন্ত’ এবং তাদের শিল্পীরা। পুরনো রাজবাড়িগুলোর পরিসীমায় বসবাসকারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সৃজনশীলতার এই কার্যক্রমে। ফলে তৈরী হয় এক নতুন ধারা যা পরবর্তীতে ওই অঞ্চলের মানুষকে আগ্রহী করে তোলে হারানো ইতিহাসকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে।

উড়ন্তর আসন্ন অষ্টম ও নবম পর্বের অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেন, আবিদ আসলাম (পাকিস্তানি ), অর্ণব সাহা ( বাংলাদেশ ), বার্গিট্রা ভলজ (জার্মানি), চন্দ্রেয়ী দে (ভারত), ডেভিড তাগলিয়াবু (ইতালী ), দীপক কুমার ইয়াদাভ ( ভারত ), এলডি গিগনার্ড (ফ্রান্স) , ফৌজিয়া মাহিন চৌধূরী (বাংলাদেশ), হেলেনা আম্বেম্বে (সাউথ আফ্রিকা), জুয়েল চাকমা (বাংলাদেশ), কাজী তৌফিকুল ইসলাম (বাংলাদেশ), মনির মৃত্তিক (বাংলাদেশ) , মিনিনকূলে নিয়েগই (সাউথ আফ্রিকা), মোহিত প্রিয়দর্শী (ভারত), মুহাম্মদ শাফায়েত হোসেইন (বাংলাদেশ ), নবিল রহমান (বাংলাদেশ/নিউইয়র্ক), নিশা রেচেল ফিলিপ (ভারত), রাকিয়া উইলিয়ামস (স্পেন), রঙ্গজীর রায় (ভারত), রুবি কর্মকার (ভারত) , রুপানীথান পাক্কিয়ারাজা (শ্রীলংকা ), এস এম আসাদুজ্জামান রুপ (বাংলাদেশ), সর্বান চৌধুরী (ভারত), সারিয়া তাসনিম আহমেদ ( বাংলাদেশ ), সিমাঙ্গলিস (সাউথ আফ্রিকা ), সৌনক দাস ( বাংলাদেশ ), সায়েদ মুহাম্মদ জাকির (বাংলাদেশ ), তাইয়ারা ফারহানা তারেক ( বাংলাদেশ ), তানভীর আলিম ( বাংলাদেশ ), মুনা হোসেন ( বাংলাদেশ ), অমিয় রায় ( বাংলাদেশ ) ।

প্রতিবারের মতই সকল অংশগ্রহনকারী শিল্পীরা সহজলভ্য মৌলিক উপাদান নিয়ে সকল কাজ প্রস্তুত করেন। স্থানটির পরিবর্তনশীল অস্তিত্ব ও সময়ের পারস্পারিক সম্পর্কের বিশ্লেষণ শিল্পকর্ম উপস্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে হতে নয়টি কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশে উড়ন্তর হাত ধরে প্রায় ১০টি দেশের শতাধিক শিল্পী তাদের সৃজনশীল দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ১০টিরও বেশি পরিত্যক্ত ঐতিহাসিক স্থাপনা নিয়ে কাজ করে আসছেন। এবারের কর্মসূচি কিওরেটররা আশা করছেন, একাধিক মাধ্যমের সংমিশ্রন যথাযথভাবে সম্মিলিত হলে বেরিয়ে আসে অসাধারণ কিছু নান্দনিক উপস্থাপনা। কাজের নির্ধারিত স্থান সমূহের পারিপার্শিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপাদানগুলো মিলিয়ে নতুন ধারার শিল্পকর্ম উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন কিউরেটর সাদিয়া মিজান ও জিওভান্নি মরাস্যুটটি (জার্মানি ) ।

এই শৈল্পিক বিনিময় কর্মসূচির অষ্টম পর্ব চলে ১৫-২৬ নবেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত এবং নবম পর্ব চলে ২৭ নবেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত। তিনটি ভিন্নধমী কর্মশালা ২০ নবেম্বর ২৮-২৯ নবেম্বর এবং ৪-৬ ডিসেম্বর যথাক্রমে একটি মালাকারদে সাথে শোলার জিনিষ তৈরীর কর্মশালা পরিচালনা করেন শিরিষ চন্দ্র মালাকার, অরিগামি কর্মশালা পরিচালন করেন আসাদুজ্জামান রুপ এবং অপ্রচালিত বস্তু থেকে নান্দনিক জিনিস তৈরির কর্মশালা পরিচালনা করেন অর্ণব সাহা ।

(বিএম/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯)