আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের বিরোধী দলগুলোর তীব্র আপত্তি ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বহুল বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল উঠছে। অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেয়ার লক্ষ্যে বিজেপি সরকারের আনা এই বিল সোমবার লোকসভায় উপস্থাপন করবেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

তবে উত্তরপূর্বাঞ্চলের অনেকেই বলছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আসলে দেশটিতে অবৈধ অভিবাসন বন্ধের লক্ষ্যে কয়েক দশকের পুরোনো চুক্তি বাতিল করার একটি কৌশল।

ছয় দশকের পুরোনো নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি সোমবার লোকসভায় পেশ করবেন অমিত শাহ। পরে বিলটি নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। তবে ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি অনায়াসে পাস হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিলটি পাসের পর সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় উঠবে। সেখানে পাস হলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে পাড়ি জমানো অমুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।

তবে বিতর্কিত এই বিলের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রভাবশালী একটি ছাত্র সংগঠন মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টা অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি মূলত ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির বিরোধী।

আসাম চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের নির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব অবৈধ অভিবাসীরা ভারতে শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন। বিলটি পাস হলে উত্তরপূর্ব ভারতের এই ছাত্র সংগঠন তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছে।

১৯৫৫ সালের মূল নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, অন্য দেশে থেকে ভারতে আসা কোনও ব্যক্তি যদি ভারতীয় নাগরিকত্ব চান; তাহলে তাকে গত ১৪ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১১ বছর এ দেশে বসবাস এবং এর পক্ষে নথিপত্র উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু সেই বিধান বদলাতে আনা এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, ভারতে টানা ৫ বছর ধরে বসবাস করা অমুসলিমরাই নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য অবেদন করতে পারবেন।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা শশী থারুরসহ দেমটির অনেক বিরোধী দলীয় নেতা আইনটিকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে এর বিরোধিতা করেছেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, যদি সব সম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়; তাহলে আমরা সেটা মেনে নেব। কিন্তু আপনি যদি ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য করেন, তাহলে আমরা এটার বিরুদ্ধে লড়াই করবো।

কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বিলটিকে ‘মৌলিকভাবে অসাংবিধানিক’ উল্লেখ করে বলেছেন, বিলটিতে যা প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি মেনে আইন হলে তা ‘ভারতের মূল ধারণায়’ আঘাত হানবে।

কিন্তু বিজেপি বলছে, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে যে সংখ্যালঘুরা ভারতে এসেছেন; তাদের জন্যই এ আইন দরকার। আসামের বিজেপি নেতা হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, বিলটির উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার যারা হয়েছেন তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা... সুতরাং এই আইনটি অসাম্প্রদায়িক হবে; সেটি কীভাবে আপনি প্রত্যাশা করতে পারেন?এনডিটিভি।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯)