স্টাফ রিপোর্টার : ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে উত্তাল রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার হত্যার বিচারের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন।

সোমবার দুপুরে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন। তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন।

গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে অজ্ঞাত মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হত্যার আলামত সংগ্রহ করেন। সুরতহালে পুলিশ গুরুতর কিছু ইনজুরি পান। সংগৃহীত আলামত ফরেনসিকে পাঠায়। ওই ঘটনার পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে।

গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে রমনা থানার ওসি নিহতের পরিচয় নিশ্চিতের তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘নিহতের নাম রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা। তার বাবার নাম রোকন উদ্দিন। তিনি হবিগঞ্জ এলাকায় পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত। রুম্পার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায় হলেও রাজধানীর মালিবাগের শান্তিবাগ এলাকায় থাকতেন’।

ওই ঘটনার পর ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি দক্ষিণ বিভাগ)। ডিবি দক্ষিণের উপ-কমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ বলেন, ‘ঘটনাটি চাঞ্চল্য ছড়ানোর পর ছায়া তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগ। আসলে সুইসাইড নাকি হত্যা সেটা আগে নিশ্চিত হওয়া জরুরি। তাছাড়া অন্যান্য আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর স্পষ্ট হবে মোটিভ।’

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুম্পার ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’র ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার কথিত প্রেমিক আব্দুর রহমান সৈকতের বিরুদ্ধে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গতকাল রবিবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তার বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। অপরদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।

সোমবারের কর্মসূচিতে‘রুম্পা হত্যার বিচার চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’, ‘রুম্পার ধর্ষণ ও হত্যার বিচার চাই ‘, ‘বিচার হতেই হবে’, ‘আর কত?’ ‘স্টপ, স্টপ, স্টপ’সহ নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

আন্দোলনের মুখপাত্র ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জিসাদ মোহাম্মদ বলেন, রুম্পা হত্যার পাঁচদিন পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত এ হত্যার কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। রুম্পার হত্যার রহস্য তার সহপাঠীরা জানতে চায়, তাই দ্রুত এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। গত চারদিন ধরে আমরা ক্যাম্পাসের মধ্যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেও প্রশাসন এখনও ঘুমিয়ে আছে। তাই গতকাল রোববার আমরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি।

তিনি বলেন, আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে রুম্পার ফরেনসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা না হলে আগামী বুধবার থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে কঠোর আন্দোলন শুরু করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান শেখ নাহিদ নিয়াজ বলেন, রুম্পার মতো একটি মেধাবী ছাত্রীকে আমরা অকালে হারিয়েছি। আর কোনো সন্তানকে আমরা অকালে হারাতে চাই না। রুম্পা হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আমরাও আন্দোলনে যোগ দিয়েছি।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এ আন্দোলন শুধু আমাদের নয়, দেশের প্রতিটি মানুষের সমর্থন রয়েছে। রুম্পার অকাল মৃত্যু কেন হলো, তা আমরা জানতে চাই। এ দাবিতে আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকরাও আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাবেন’ বলেও জানান ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান।

ফ্লিম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষিকা সাকিরা বলেন, আমরা কোনো শিক্ষার্থীকে হারাতে চাই না। আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক, এটাও আমরা দেখতে চাই না। কোনো বাবা তার সন্তান হারাবে, তা আর চাই না। রুম্পা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। সে ছিল প্রাণ-চঞ্চল প্রকৃতির। কেন সে খুন হয়েছে, কে করেছে, কীভাবে করেছে- তা জানতে চাই। দ্রুত প্রশাসনকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

অবস্থান কর্মসূচির একপর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। প্রদক্ষিণ শেষে আবারও তারা মূল গেটের সামনে অবস্থান নেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছিল।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯)