স্টাফ রিপোর্টার : গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আনন্দ চোখে-মুখে। পড়াশোনার পাঠ চুকে এখন তারা ঢুকবেন কর্মজীবনে। সমাবর্তন আয়োজনে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি নিয়ে তারা দারুণ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও লুকোতে পারছিলেন না দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ। এই দুশ্চিন্তা জীবিকা নির্বাহের জন্য কর্মপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তা নিয়ে, চাকরির ক্ষেত্রে তুমুল প্রতিযোগিতার বাজারে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ডিগ্রিলাভকারী গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন দুশ্চিন্তার কথা জানা যায়। শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় এ আনন্দ-আয়োজনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা-খুনসুটির পাশাপাশি গ্র্যাজুয়েটদের মুখে মুখে শোনা যায় কর্মজীবন নিয়ে আলাপ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে সদ্য পাস করা গ্র্যাজুয়েট ইশতিয়াক হাসান বলেন, ‘ডিগ্রি অর্জন তো হলো, এখন ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়ানোর সময়। পেশা বেছে নেওয়ার সময়। কিন্তু এখনও জানি না কী হতে যাচ্ছে আমার পেশা। মা-বাবার অনেক স্বপ্ন আমাকে নিয়ে। বাড়ির বড় সন্তান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করেছি। পরিবার তো বড় স্বপ্ন দেখবেই। কিন্তু চাকরির বাজারের দিকে তাকালে হতাশ হয়ে পড়ি।’

অবশ্য সরকারি চাকরির জন্য বহু আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইশতিয়াক। সে কথা জানিয়ে বলেন, ‘সরকারি চাকরি প্রথম পছন্দ। সে জন্য পড়ালেখাও করছি। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে হয়তো পেয়ে যাবো। আপাতত এর বাইরে কিছু ভাবছি না।’

‘তবে পড়াশোনা শেষ হওয়ায় এখন আর হলে থাকা হবে না। সেজন্য বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা-খাওয়ার খরচ বেড়ে যাবে। এই সময়টা একটু কষ্টের। কারণ, চাকরির জন্য প্রস্তুতি জরুরি। কিন্তু এই সময়টা বাড়ি থেকে টাকা নিতেও খারাপ লাগে।’- বলছিলেন আনিতা ঘোষ নামের আরেক গ্র্যাজুয়েট।

তিনি বলেন, ‘টিউশনি করছি। এতে কিছুটা আর্থিক চিন্তা কম। এখন শুধু প্রস্তুতি আর অপেক্ষা করছি ভালো চাকরির।’

মেয়ের সমাবর্তনে অংশ নিতে পটুয়াখালী থেকে এসেছেন মো. আব্দুল ওয়াহাব। মেয়ে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে সমাবর্তনের প্রাথমিক কার্যক্রমে ছিলেন, তখন টিএসসির মোড়ে তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ওয়াহাব। তিনি বলেন, ‘মেয়ে আমার অনেক কষ্ট করেছে। এখন আনন্দের দিনে মেয়ে ডেকেছে, তাই পুলিশের চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে একদিনের জন্য ঢাকায় এসেছি। তবে মেয়েকে নিয়েই বাড়ি ফিরবো।’

তিনি বলেন, ‘মেয়ে গ্র্যাজুয়েট হয়েছে। পেশা সে নিজেই বেছে নেবে। আমার কোনো জোরাজুরি নেই।’

তবে ইশতিয়াক-আনিতাদের মতো বেশ ক’জন গ্র্যাজুয়েটই বললেন, এখন স্বজন-শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে চাকরি নিয়েই প্রশ্ন শুনতে হবে বেশি, যেমন ‘কী চাকরি করছো?’ ‘কোথাও চাকরি হয়েছে?’ সেজন্য মানসিক চাপটাও সামনে আসছে বেশি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্র্যাজুয়েটরা সোমবারের ৫২তম সমাবর্তনে অংশ নিয়েছেন।

সকাল থেকে গ্র্যাজুয়েটরা উৎসবে মাতলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের খেলার মাঠে সমাবর্তনের অনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় দুপুর ১২টা থেকে। সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা। তাকে অনুষ্ঠানে ‘ডক্টর অব সায়েন্স’ সম্মাননা দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার জন্য ২০ হাজার ৭৯৬ গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছেন।

অনুষ্ঠানে ৭৯ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৮টি স্বর্ণপদক, ৫৭ জনকে পিএইচডি, ৬ জনকে ডিবিএ এবং ১৪ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের গ্র্যাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে সরাসরি সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিয়েছেন।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯)