স্টাফ রিপোর্টার : একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানাপ্রাপ্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মো. আওলাদ হোসেনকে ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হতে বা হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, কারা এসব ভুয়া পরোয়ানায় যুক্ত তা খুঁজে বের করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া শেরপুরের পরোয়ানা যাচাই সাপেক্ষে তাকে জামিন দিতে ওই আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। জামিনের পর শেরপুর কারাগার থেকে মুক্তি দিতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে যদি অন্য কোনো পরোয়ানা আসে সেটার সঠিকতাও যাচাই করতে বলেছেন উচ্চ আদালত।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে করা আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। সঙ্গে ছিলেন এমাদুল হক বশির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, যদি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তিনি বাইরে থাকেন তাহলে তিনি নিজেই আসবেন আর যদি কারাগারে থাকেন তাহলে তাকে হাজির থাকতে হবে।

আশুলিয়ার মির্জানগরের টাকসুর গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. আওলাদ হোসেন। চাকরি করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে। ৩০ অক্টোবর হঠাৎ তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার থেকে পরোয়ানা আছে বলে জানানো হয়।

আওলাদ হোসেন একের পর এক পরোয়ানা নিয়ে প্রথমে কক্সবাজার পরে রাজশাহী তারপর বাগেরহাট হয়ে বর্তমানে শেরপুরের এক মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

আইনজীবীর দাবি এসব পরোয়ানা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে করা। তাকে যে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টে হাজিরের জন্য নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন আওলাদ হোসেনের স্ত্রী।

আইনজীবী এমাদুল হক বশির বলেন, প্রথমে এক মামলায় গত ৩০ অক্টোবর আওলাদ হোসেনকে আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেদিন আওলাদকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হলে তার জামিন আবেদন করা হয়। আদালত তার নথিপত্র কক্সবাজারের আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন। এ নথিপত্র কক্সবাজারের আদালতে পৌঁছার পর জামিন আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ নভেম্বর কক্সবাজার আদালত বলেন, ওই মামলায় আওলাদ নামে কোনো আসামি নেই। গ্রেফতারি পরোয়ানাটি এই আদালত থেকে ইস্যু হয়নি। ওই পরোয়ানা সৃজন করা হয়েছে। তাকে মুক্তি দেয়া হোক। এরপর মুক্তিনামা যখন ঢাকা জেলখানায় পৌঁছল তখন ঢাকা কারাগার থেকে বলল তার বিরুদ্ধে রাজশাহীতে একটি মামলা রয়েছে এবং তাকে রাজশাহী পাঠানো হবে। রাজশাহী কোর্টে যখন তার জামিন চাওয়া হয় তখন রাজশাহী কোর্ট বলল এ মামলায় আওলাদ হোসেন নামে কোনো আসামি নেই এবং ওই নামে এ আদালত কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি। তখন তাকে মুক্তি দেয়ার কথা বলার পর কারাগার থেকে জানানো হয় তার বিরুদ্ধে বাগেরহাটে আরও একটি মামলা আছে। সেখানে তাকে পাঠানো হয়। ১ ডিসেম্বর বাগেরহাট আদালতে জামিন চাইলে আদালত বলেন, আওলাদ হোসেন নামে এ মামলায় কোনো আসামি নেই এবং তার নামে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা এখান থেকে জারি করা হয়নি। ওইদিন বাগেরহাটের আদালত তাকে মুক্তির নির্দেশ দেন। যখন তাকে মুক্তির নির্দেশ দিলেন, তখন জেলখানা কর্তৃপক্ষ বলল তার বিরুদ্ধে শেরপুরে এক মামলার ওয়ারেন্ট আছে। বর্তমানে তিনি শেরপুর কারাগারে আছেন।

আইনজীবী বশির বলেন, আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোর্ট বলছে উনারা এগুলো জারি করেননি। এজন্য আওলাদ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন হাইকোর্টে একটি রিট করেন। আমরা চেয়েছি তাকে মহামান্য হাইকোর্টে হাজির করা হোক এটা নিশ্চিতের জন্য যে, তিনি বেআইনিভাবে আটক নেই।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৯)