স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি সরকারের আমলে দেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করা হয়েছে বলে ভারতের সংসদে উপস্থাপিত বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ভারতের সংসদে বলা হয়েছে- বিএনপির সরকারের আমলে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা জোর গলায় বলতে পারি, বিএনপির আমলে এখানে সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা করা হয়েছে। সংখ্যালঘুর ওপর আওয়ামী লীগের আমলে যতটা নির্যাতন হয়েছে, তা আর কখনো হয়নি।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল এসব কথা বলেন। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপির পূর্বঘোষিত শোভাযাত্রায় পুলিশের বাধার পর এ সংবাদ সম্মেলনে করেন ফখরুল।

ওই কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্যের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকেও দেখা যায় সেখানে। বিএনপির কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের বের হতে পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার নিষেধ করতেও দেখা যায়।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাস হয়। বিলটি উত্থাপনকালে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে বহু শরণার্থী এসে বছরের পর বছর ধরে বাস করছে।

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাদের সংসদে (এ বিল পাসের সময়) খুব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে। এটা নাকি বিএনপির আমলে হয়েছে। নতুন নাগরিকত্ব বিলে বলা হয়েছে, অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু মুসলিমদের দেওয়া হবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আমাদের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটা র‌্যালি হওয়ার কথা ছিল। সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। কিন্তু সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নেতাকর্মীরা কার্যালয় থেকে নিচে নামলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপি এই মুহূর্তে কোনো সংঘাতে যেতে চায় না বলে উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, আমরা আমাদের অধিকারগুলোর কথা বলছি। আপনারা দেখেছেন, সভা-সমাবেশ করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। এমনকি সাংগঠনিক কার্যক্রম করতেও অনুমতি নিতে হয়।

দেশে এখন প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে দাবি করে ফখরুল বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরে এক হাজার ৫৯৯ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা এর নাম দিয়েছে ‘বন্দুকযুদ্ধ’। বিএনপির হিসাব মতে, এটি দুই হাজারেরও বেশি। এক লাখের ওপর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মামলা দেওয়া হয়েছে। আজকে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে যে ব্যক্তি ভিন্নমত পোষণ করে তাকে হয় গ্রেফতার করা হয়, নতুবা গুম করা হয়। সেজন্য অনেক নেতা, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকও গুম হয়েছেন।

পাকিস্তান আমলের চেয়েও গত ১০ বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘ থেকে বারবার বাংলাদেশকে ডাকা হয়েছে। মানবাধিকার রক্ষায় চার বছর আগে বাংলাদেশ যে অঙ্গীকার করেছিল, তার একটিও রক্ষা করেনি। এজন্য গতবার সরকারের প্রতিনিধিদের তিরস্কার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রক্রিয়া গ্রহণ করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিক, বিদেশে নারী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৯)