রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : আজ (১০ ডিসেম্বর) নওগাঁর রাণীনগর হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর এই দিনটি রাণীনগর বাসীর জন্য একটি স্মরনীয় দিন। আজকের এই দিনে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ৩৭ ঘন্টা সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে হানাদার মুক্ত হয়। 

স্বাধীনতার সংগ্রামে সাড়া দিয়ে সারাদেশের ন্যায় এই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর নওগাঁর রাণীনগর উপজেলাবাসী আজকের এ দিনে শত্রু মুক্ত হয়ে বিজয় উল্লাস আর “জয় বাংলা, বাংলার জয়” জয়ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তুলেছিল রাণীনগর উপজেলার আকাশ-বাতাস। এ এলাকা পাক হানাদার মুক্ত করতে অসংখ্য জীবন বলিদান এবং কত অসহায় মা বোনের ইজ্জত লুন্ঠন করেছিল সেই ভয়াবহ দিনে তার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ জানে না।

তৎকালীন সময়ে স্থানীয় কিছু রাজাকার, আলবদর ও তাদের দোসরদেরকে নিয়ে আতাইকুলা পালপাড়া, হরিপুর, স্থল-বড়বরিয়া গ্রামে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটে মেতে উঠে। এছাড়াও পঙ্গুত্বের অভিশাপ আর মা-বাবা, স্বামী, স্ত্রী, ভাই, বোন হারানো অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে এখনও অনেক নারী-পুরুষ বেঁচে আছে। ১৯৭১ সালের ৯ই ডিসেম্বর রাণীনগর পাক-হানাদার মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা থানা সদরে থাকা হানাদার ক্যাম্প চারিদিক থেকে ঘেরাও করেন। পরদিন ১০ই ডিসেম্বর দীর্ঘ ৩৭ ঘন্টা সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ন হয়ে শেষের দিকে ভোরে উভয় পক্ষের গোলাগুলির এক পর্যায়ে ১৭ জন রাজাকার অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করে।

বীরমুক্তিযোদ্ধা আকতারুজ্জামান রনজু ও হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে এই সম্মুখ যুদ্ধে স্থানীয়দের মধ্যে অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ দুলু, আব্দুর রাজ্জাক, ইসমাইল হোসেন, নুরুল ইসলাম, শহিদুল্লাহ মিঞা, চয়েন সরকার এবং জেলা পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান, আফজাল হোসেনসহ নাম না জানা আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধারা।

এই সম্মুখ যুদ্ধে রাণীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লুৎফর রহমান পাক-হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। সেই সাথে বিরোচিত লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে রাণীনগরকে হানাদার মুক্ত করেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই মুক্তিযোদ্ধা নায়ক সেনারা।

(এসকেপি/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৯)