আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : মায়ের অধিকার ও সম্মান বাঁচাতে গিয়ে যৌতুকলোভী পিতার হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে একমাত্র ছেলে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পিতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব সদস্যরা। ঘটনাটি ঘটেছে কালকিনি উপজেলার ডাসার থানা এলাকার ধূলগ্রামে। সরোয়ার কালকিনী উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক। পুত্রকে মারধর ও র‌্যাবের হাতে পিতা গ্রেফতারের খবরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার মধ্য ধূলগ্রাম গ্রামের মৃত মুজিবুর রহমান মুন্সী’র ছেলে সরোয়ার হোসেন মুন্সীর সাথে ২৬ বছর পূর্বে মাদারীপুর সদরের চরমুগুরিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল সত্তার চৌকিদারের ছোট মেয়ে নুরন্নাহারের সাথে বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়।

বিয়ের বছর না ঘুরতেই যৌতুকের জন্য নুরুন্নাহারকে অকথ্য নির্যাতন শুরু করে সরোয়ার। এরই মধ্যে সরোয়ার ও নুরুন্নাহারের দাম্পত্য জীবনে একমাত্র ছেলে আরাফাত এর জন্ম হয়। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে নির্যাতীতা নুরুন্নাহার তার ভাই ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে একাধিকবার স্বামী সরোয়ারের যৌতুকের টাকার দাবি পূরণ করেন। কিন্তু তাতেও নির্যাতনের মাত্রা কমেনি সরোয়ারের।

এর এক পর্যায় সরোয়ার স্ত্রী ও দুধের সন্তানকে রেখে সৌদি আরব পাড়ি জমান। ১০ বছর বিদেশ জীবনে সরোয়ার কোন রকমের যোগাযোগ বা খোঁজ রাখেনি স্ত্রী নুরুন্নাহার ও সন্তান আরাফাতের। এদিকে বিদেশ থাকা অবস্থায় সেখানে অবস্থান করা এক নারীর সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয় সরোয়ার। সম্প্রতি শুন্যহাতে সরোয়ার দেশে ফিরে স্ত্রী নুরুন্নাহারের উপর আবারও যৌতুকে জন্য নির্মম নির্যাতন চালাতে শুরু করে। চরম অমানবিক নির্যাতনের শিকার নুরুন্নাহার যৌতুক লোভী স্বামী সরোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা জামিন নিয়ে সরোয়ার স্ত্রীর উপর নির্যাতন আরও বাড়িয়ে দেয়। দলীয় পদের অপব্যবহার করে সরোয়ার পরিবারসহ এলাকায় বেপরোয়া হয়ে বিরুপ কাজে জড়িত হলেও তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না।

এদিকে পরকীয়ায় আসক্ত সরোয়ার দেশে ফিরে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার মাগুরা গ্রামের ওই নারীকে গোপনে বিয়ে করে। দ্বিতীয় বিয়ের পর ১ম স্ত্রী নুরুন্নাহারের উপর সরোয়ার নির্যাতনের চারিয়ে নুরুন্নাহারকে বাড়ি ছাড়া করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করে। এদিকে সরোয়ার মীনা নামের এক কন্যা সন্তানকে নুরুন্নাহারের কাছে লালন-পালনের জন্য এনে দেয়।

সম্প্রতি সরোয়ার প্রথম স্ত্রী নুরুন্নাহার ও তার স্বজনদের ফাঁসাতে পালিত মেয়ে মীনাকে নিজের কাছে নিয়ে থানায় দুরভিসন্ধিমুলক অভিযোগ করলে ডাসার থানা পুলিশ ওই অভিযোগের তদন্তে কোন ভিত্তি না পাওয়ায় বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানকে মিমাংসার জন্য বলেন। সে অনুযায়ি ২৯ নভেম্বর সকালে বালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত সালিশ বৈঠকে চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খাঁন’র উপস্থিতিতে সরোয়ার মুন্সী স্ত্রী নুরুন্নাহারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় একমাত্র ছেলে আরাফাত মুন্সী (২০) পিতাকে বাধা দিতে গেলে সরোয়ার তার সঙ্গীয় লোকজন নিয়ে আরাফাতকে এলোপাথারী মারধর করে রক্তাক্ত জথম করে। গুরুতর আহতাবস্থায় আরাফাতকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

ডাসার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া জানান, সরোয়ার এজন বাটপার টাইপের লোক। তার নির্যাতন ও নারী কেলেংকারী বহু অভিযোগ রয়েছে। শালিশ বেঠকৈর হামলার পরে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই পালিত মেয়ে মীনাকে নিজের জিম্মায় নিয়ে যায় সরোয়ার। পুত্রকে মারধরের ঘটনায় মা নুরুন্নাহার বাদী হয়ে স্বামী সরোয়ারসহ তিন জনকে আসামী করে ডাসার থানায় মামলা দায়ের করেন, নং ০১ (০৪-১২-১৯)। ওই মামলায় সোমবার সকালে মাদারীপুর র‌্যাব-৮ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে সরোয়ার মুন্সীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত সরোয়ারকে মঙ্গলবার মাদারীপুর আদালতে প্রেরণ করেছে ডাসার থানা পুলিশ।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৯)