স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা সরিয়ে ভিন্ন রিপোর্ট আদালতে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন জমা চেয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের শুনানিতে বসার একদিন আগে আজ বুধবার এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই আশঙ্কা কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) যে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে, সেই মেডিকেল রিপোর্ট এখন পর্যন্ত আসেনি। আমরা যেটুকু জানতে পেরেছি যে, বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, সেই রিপোর্টটিকে সরিয়ে দিয়ে অন্য কোনো রিপোর্ট দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কারভাবে লক্ষ্য করছি, অত্যন্ত সচেতনভাবে দেশনেত্রীকে বেআইনিভাবে কারাগারে আটক করে রাখার জন্য সরকার কাজ করছে এবং এভাবে তারা (সরকার) বড় রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।’

অনুষ্ঠানে গত ৩০ নভেম্বর বিএসএমএমইউ উপাচার্যের গঠিত মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টটি পড়ে শোনান ফখরুল। ওই রিপোর্টে খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘ক্রিপল স্টেইজ’ উল্লেখ করে তার উন্নত চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে।

তবে মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, এই রিপোর্টটিই পরে সুপ্রিম কোর্ট চেয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা উপস্থিত করা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের মামলার জন্য যে সাজাটা হয়েছে, সেই সাজার কারণে একই ধরনের মামলায় অন্য আসামিদের জামিন হয়ে গেছে, তারা জামিনে আছেন। কিন্তু বেগম জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। প্রতিবারই তাকে বিভিন্নভাবে সরকার তার জামিনকে বাধাগ্রস্ত করছে।’

বুধবার গুলশানে লেক শোরে বিএনপির উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে এক গোলটেবিল বৈঠক হয়। বৈঠকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের সন্ধান চেয়ে অশ্রুসজল কণ্ঠে বক্তব্য রাখেন।

শুরুতে বিএনপির সম্পাদনায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা তথ্য সম্বলিত গ্রন্থ ‘অ্যাবসেন্স অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সিস্টেমেটিক হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনস বাই স্টেট অ্যাপারেটাস’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপি মহাসচিব। পরে গ্রন্থের ওপর তথ্যচিত্র তুলে ধরেন ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ।

এরপর দলের মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

এই গোলটেবিল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ ১৫ টি দেশের কূটনৈতিকরা অংশ নেন।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং শ্যাম ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, এ এইচ এম মোফাজ্জল করীম, নুর খান, মাসুদ আজিজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার শাহ ফয়সাল কাকর পাকিস্তানে মানবাধিকার পরিস্থিতি রক্ষায় তার দেশের সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে বক্তব্যের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের কাশ্মীর ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন। দুই পৃষ্ঠার বক্তব্য রাখার সময়ে অনুষ্ঠানের সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুইবার তাকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার অনুরোধ করেন।

ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার তার বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদির সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় সংবিধান থেকে কাশ্মীরে ‘বিশেষ সুবিধা’ তুলে নেয়ার পর সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং কাশ্মীরের জনগণের স্বাধিকার নিয়ে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থের লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে অভিহিত করে যে উক্তি করেছেন তার তুলে ধরেন।

গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপির সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল আলম চৌধুরী, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এনামুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, জহিরউদ্দিন স্বপন, জেবা খান, তাবিথ আউয়াল, মীর হেলাল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আনিসুর রহমান খোকন, শায়রুল কবির খান, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১১, ২০১৯)