সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : জরিনা আক্তার বয়স ৭১ বছর। ১০ সন্তানের মা তিনি। ১০ জনের মধ্যে ৭ জন ছেলে এবং ৩ জন মেয়ে। স্বামী মুনসুব আলীর মৃত্যুর পর নিজ সন্তানেরা ভরন পোষন না করায় ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। ফলে ভিক্ষা করেই চলে তার জীবন সংসার। অবশেষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তার ভাগ্যে জুটল বয়ষ্ক ভাতার কার্ড। 

নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের হরিয়ামালা মহল্লার বাসিন্দা জরিনা। স্বামীর ভিটেতেই একটি টিনের চালা নির্মান করে কোনমতে এটিতে বসবাস করেন। নেই পানীয় জলের সুবিধা ও শৌচাগার। নানা অসুবিধার মধ্য দিয়ে এখানে থেকেই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন নির্বাহ করছেন তিনি। ১০ সন্তান থাকার পরও জরিনা আক্তারের ভিক্ষাবৃত্তির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রচার হয়। এ খবরে কল্যানী ফাউন্ডেশন এগিয়ে আসে তার ভরন পোষনের দায়িত্ব নিতে।

এদিকে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম বিষয়টি অবগত হয়ে বৃদ্ধ অসহায় ওই নারীকে বয়ষ্কভাতার কার্ড সহ সার্বিক সুবিধা দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পরামর্শ দেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমান, কল্যানী ফাউন্ডেশনের সভাপতি কল্যানী হাসান ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মাকে সঙ্গে নিয়ে জরিনা আক্তারের হাতে বয়ষ্ক ভাতা কার্ড (বই) তুলে দেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে বর্তমান ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকা রয়েছে এই বয়স্ক ভাতার বইটিতে। এই বাড়তি টাকা পাবেন জরিনা আক্তার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-ইমরান রুহুল ইসলাম জানান, তার নিয়মিত ভাতার সঙ্গে ৩ মাস পর পর ৩ হাজার টাকা যুক্ত করে দেয়া হবে। এছাড়া তার যাবতীয় বিষয়ে খোজখবর নিয়ে কী উন্নয়ন করা যায় তা আমরা সবই দেখব। ভরন পোষন আইনে যদি জরিনা আক্তার মামলা করেন সে ক্ষেত্রে লিগাল এইডের মাধ্যমে বিনা পয়সায় তাকে আইনগত সহায়তা দেয়া হবে। জরিনা আক্তার কার্ড হাতে পেয়ে আনন্দ অশ্রুতে বার বার ভেঙ্গে পড়েন।

তিনি বলেন, আমি খুব খুশি, আমাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়ে আমার খোজ খবর নেয়ার জন্য। সন্তানদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি ১০ সন্তানের মা হলেও আমি ভিক্ষা করি। আমাকে আমার ছেলে বউ ও নাতী নাতনীরা নানা ভাবে অত্যাচার উৎপীড়ন ও গালিগালাজ করে। আমি এসবের বিচার চাই।

(এসবি/এসপি/ডিসেম্বর ১২, ২০১৯)