উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : বিগত কয়েকদিন যাবৎ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে অপহৃত বুদ্ধিজীবীদের আজ রাতের অন্ধকারে মীরপুর ও মোহাম্মদপুরের বধ্যভুমিতে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে আলবদরবাহিনী। পাকিস্তানী জেনারেল রাও ফরমান আলীর পরিচালনায় গভীর রাতে লোকচক্ষুর অন্তরালে এই বর্বর পাপাচার অনুষ্ঠিত হয়।

যৌথবাহিনী ফরিদপুর থেকে ঢাকার পথে মধুমতি নদী অতিক্রম করে। অতি দ্রুত ঢাকা পৌঁছানোর জন্য মিত্রবাহিনী দুটি ব্রিগেড শত্রুর অবস্থান এড়িয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে নদী পার হয়। এ কাজে স্থানীয় জনগণ যৌথবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে। মিত্রবাহিনী পারাপারের জন্য শত শত নৌকার বন্দোবস্ত করে সারা রাত ধরে তাঁদের নদী পার করে।

এদিকে যৌথবাহিনীর একটি ব্রিগেড মানিকগঞ্জে পাক অবস্থানের ওপর আক্রমণ করে এবং মানিকগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করে সাভারের দিকে এগিয়ে আসে।

যৌথবাহিনী ঢাকার অদূরে টঙ্গীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগের পাড়ে পাকবাহিনীর মুখোমুখি হয়। শত্রুসৈন্যরা এখানে শক্তিশালী প্রতিবন্ধকতা গড়ে তুলেছিল। কেননা টঙ্গী হচ্ছে উত্তর দিক থেকে ঢাকায় প্রবেশের পথ।

অপরদিকে ঢাকার পশ্চিম-উত্তর সীমানা বরাবর চন্দ্রা-সাভার-মীরপুর অঞ্চল ধরে রাজধানীর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে যৌথবাহিনীর আর একটি ব্রিগেড। ঢাকার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে শীতলক্ষ্যার পাড়ে ডেমরায় যৌথবাহিনী পাক প্রতিরোধ ব্যুহের ওপর আঘাত হানে। আর একটি দল শীতলক্ষ্যা পারহয়ে রূপগঞ্জ মুক্ত করে।

হেলিকপ্টারে করে যৌথবাহিনী গোমতী পার হয়ে মেঘনা তীরবর্তী বৈদ্যেরবাজারে অবস্থান নেয়।

চট্টগ্রাম সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কুমিরা ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে যাত্রা শুরু করে।

হানাদার বাহিনীর একটি ব্রিগেড কক্সবাজার হয়ে স্থলপথে বার্মায় পালাবার পথে মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।

জেনারেল মানেকশ’র বানী প্রচারিত হয় রাও ফরমান আলির উদ্দেশে। জেনারেল মানেকশ বলেন, আমার সৈন্যরা এখন ঢাকাকে ঘিরে ধরেছে এবং ঢাকার সেনানিবাস কামানের গোলার আওতায়। সুতরাং আপনারা আত্মসমর্পণ করুন। আত্মসমর্পণ না করলে নিশ্চিত মৃত্যু। যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে এবং তাদের প্রতি ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার করা হবে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই দিন শত শত পাকসেনা আত্ম-সমর্পণ করে। এক ময়নামতিতেই আত্মসমর্পণ করে ১১৩৪ পাকসৈন্য।

রাতে তাঁবেদার গভর্নর ডা.মালিক আত্মসমপর্ণের অনুমতি চেয়ে ইসলামাবাদে জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে জরুরি তারবার্তা পাঠান। একই সময় তিনি ও পাকবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের অধিনায়ক জেনারেল নিয়াজি ইয়াহিয়াকে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু ইয়াহিয়া উভয়ের অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে জানান, নিশ্চয়ই চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য হস্তক্ষেপ করবে। “অপেক্ষা করো এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাও।”

কুমিল্লার মন্দভাগ এলাকায় যুদ্ধরত ছিলেন তিন ভাই-বদিউজ্জামান,করিমুজ্জামান ও শাহজাহান। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে বড় ভাই বদিউজ্জামান তাঁদের ৯৮ রামকৃষ্ণ মিশন রোডের বাড়িটি পরিণত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে। ১০ ডিসেম্বর ছোট দুই ভাই ঢাকায় এসে ভোর রাতে বাড়িতে দেখা করতে আসেন। ১৩ ডিসেম্বর আলবদর বাহিনী তাঁদের ধরে নিয়ে যায় এবং পরে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে পাওয়া যায় তিন ভাই-এর লাশ।

তথ্যসূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
(ওএস/এএস/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯)