স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরে বাঙালির বিজয়ের লগ্নে জাতিকে মেধাশূন্য করতে যে বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল ঘাতকরা, সেই শহীদ সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় স্মরণ করছে দেশবাসী। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের জনতার ঢল নেমেছে।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে প্রথমে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । এরপর স্মৃতিসৌধ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ আসতে থাকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সন্তানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে গেলে জনস্রোত নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্পিকার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তারা। অনেকে তার শিশু সন্তান, পরিবারের সদস্যদের নিয়েও আসেন বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

বেলা ১১টায় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে কথা হয় স্কুলশিক্ষক আব্দুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বসাধারণ আসছেন সেই সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। কিন্তু এই দিবসের মূল তাৎপর্য হচ্ছে, যারাই আমাদের স্বাধীনতার চেতনার বিরোধী, তাদের প্রত্যাখ্যান করা। যে উদ্দেশ্য নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা জীবন দিয়েছেন, সে আলোকে রাষ্ট্র ও সমাজ গড়া।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে আমরা সবাই এখানে আসছি। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যার হোতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। এটা আমাদের সরকারের ব্যর্থতা। খুনিদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার মাধ্যমেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি সঠিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন হবে।’

প্রসঙ্গত, একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিপর্যস্ত, তখন পরাজয় সন্নিকটে আঁচ করতে পেরে তারা চূড়ান্ত আঘাত হানে বাঙালি জাতির ওপর। স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে এবং বাঙালির মুক্তিকে আরও শোকাবহ করে তুলতে তারা বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে হানাদারদের সর্বোতভাবে সহায়তায় করে তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস।

১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পর রায়েরবাজার ও মিরপুরে বিকৃত ও গলিত অনেক মরদেহ পাওয়া যায়। অনেকের মরদেহের খোঁজই আর মেলেনি। সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করে আসছে বাঙালি জাতি।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯)