খুরশিদ আলম শাওন, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) : ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে গত এক সপ্তাহ ধরে ক্রমশে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। দিনের বেলায় হালকা রৌদ্র থাকলেও সন্ধ্যার পরই ঠান্ডার প্রকৌপে কাবু হয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এর ফলে অতি তাড়াতাড়ী প্রয়োজনীয় কাজ সেরে কর্মস্থল ত্যাগ করে গৃহে ফিরে যাচ্ছে কর্মব্যস্ত মানুষ। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, শনিবার সকালে উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপামাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল।

হিমালয়ের কোলঘেঁষা সীমান্তবর্তী পঞ্চগড় জেলার পার্শ্ববতী জেলা ঠাকুরগাওয়ের রাণীশংকৈলে প্রতি বছর শীতের তীব্রতা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি। প্রতি বছর অগ্রহায়ন মাসে শীতের আগমন ঘটে। পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাঝামাঝিতে শীতের প্রকোপ বাড়ে এ উপজেলায়। এ বছর একটু আগাম শীতের আগাম আগমনে কিছুটা বিপাকে সাধারণ মানুষ।

ভোরবেলা কুয়াশাছন্ন থাকছে চারদিক। এর ফলে চলাচলের রাস্তাগুলোতে ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল গুলোকে দিনের বেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই শুরু হচ্ছে ঠান্ডা। সন্ধার পরেই শীতের কম্বল, লেপ মুড়ি দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে মানুষ। অনেকেই আগুন জ্বালিয়েও শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন।

স্থানীয়রা জানায়, দিনের বেলা বেশ গরম থাকলেও সন্ধা নামার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাতভর বৃষ্টির মত টুপটুপ করে কুয়াশা ঝরতে থাকে। বিশেষ করে ধানের শীষে কুয়াশা বিন্দু বিন্দু জমতে দেখা যায়। সকালে যারা ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটাচলা করেন কুয়াশার কারণে তাদের কাপড় ভিজে যায়।

উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সন্ধারই গ্রামের ট্রাক চালক সুমন হোসেন জানান, ভোরবেলা গাড়ী নিয়ে বের হবার সময় রাস্তায় কুয়াশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়া শীত পুরোদমে এখনও আসেনি। পুরোদমে শীতের আগমণ এর চেয়ে বেশি ঠান্ডা হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।

পৌরশহরের বন্দর শিবদিঘী রংপুরিয়া মার্কেট গুদড়ি বাজারসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে লেপ-তোশক বানাতে ব্যস্ত কারিগররা। দোকানের সামনে বসে একটার পর একটা লেপ-তোশক বানাচ্ছেন তারা।

লেপ-তোশক সেলাইকর্মী বিপ্লব, বেলাল, নয়ন বলেন, প্রায় প্রতিদিনই তারা লেপ সেলাই করে থাকেন। সাইজ অনুযায়ী প্রতিটি লেপে তারা মুজরি পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সেলাইকর্মীরাও সবাই একই নিয়মে মজুরি নিয়ে থাকেন। দিন শেষে ৫শ থেকে ৮শ টাকা রোজগার হয় তাদের। তা দিয়েই সংসার চালান তারা।

বেসরকারী এনজিও ইকো সোশ্যাল ডেভলেপমেন্ট(ইএসডিও) প্রেমদীপ প্রকল্পের উপজেলা ম্যানেজার খায়রুল আলম বলেন, শীতকালে আমরা প্রতি বছরই শীতার্তদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করি। চেষ্টা করি তীব্র শীতে একটু গরমের পরশ দেয়ার। রাণীশংকৈলে যখন প্রচন্ড শীত পড়া শুরু করবে, দু-চারদিন কুয়াশায় সূর্য মানুষ দেখতে পাবে না, এমন সময়গুলোতে শীর্তাতদের সহযোগিতা করে ইএসডিও।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী আফরিদা জানান, শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিকট দুস্থ্যদের চাহিদা চাওয়া হয়েছে। সেগুলো যাচাই বাছাই করে পুরোদমে বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।

(কেএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯)