নিউজ ডেস্ক : দেশে প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, যা প্রতিরোধযোগ্য খাদ্যদ্রব্যের মাধ্যমে ট্রান্সফ্যাট নামক এক ধরনের চর্বিজাতীয় পদার্থ ধমনীর রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে।

রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ট্রান্সফ্যাট নির্মূল করি, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাই’ শীর্ষক অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন উদ্বোধনকালে এ তথ্য জানানো হয়। ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাটমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, প্রজ্ঞা এবং কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিটসের (সিটিএফকে) গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইউনিউবেটরের সহায়তায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম সভাপতি তৌফিক মারুফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডেভোকেসি ইউনিউবেটর বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস এবং প্রজ্ঞার ট্রান্সফ্যাটবিষয়ক প্রকল্পের টিম লিডার মো. হাসান শাহরিয়ার।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিকের সভাপতিত্বে সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাত, কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) গোলাম রহমান প্রমুখ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সাধারণত ভাজা-পোড়া ও বেকারি খাবারে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট থাকে। ভেজিটেবল অয়েল (পাম ও সয়াবিন) ইত্যাদির সঙ্গে হাইড্রোজেন যুক্ত করলে তেল জমে যায় এবং ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। এই পার্শিয়াল হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও আমাদের দেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামে পরিচিত। ভাজা-পোড়া খাদ্যে একই তেল উচ্চ তাপমাত্রায় এর পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম অর্থাৎ দৈনিক ২০০০ ক্যালরির ডায়েটে তা হতে হবে ২ দশমিক ২ গ্রামের চেয়েও কম।

ট্রান্সফ্যাটের ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে ডেনমার্ক বিশ্বে প্রথম ২০০৩ সালে খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে নির্ধারণ করে। অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ইরান ও ভারতসহ মোট ২৮টি দেশে খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ কার্যকর করেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা এবং কানাডা ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পিএইচওর উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি ২০২২ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশে কমিয়ে আনার পাশাপাশি খাবারের শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট পরিহার করার ঘোষণা দিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখনও ৫০০ কোটি মানুষ শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাস করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এ পরিস্থিতির পরিবর্তনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮ সালের রিপ্লেস অ্যাকশন প্যাকেজ ঘোষণা করে যেখানে ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্সফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল সংক্রান্ত কোনো নীতি না থাকায় খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি রয়ে যাচ্ছে, যা হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত অকাল-মৃত্যু এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনা সংক্রান্ত টেকসই লক্ষ্যমাত্রা (লক্ষ্য ৩ দশমিক ৪) অর্জন কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই হৃদরোগ প্রতিরোধসহ জনস্বাস্থ্য কার্যকর উন্নয়নের জন্য ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের কোনো বিকল্প নেই বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯)