স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরসহ তার অনুসারীদের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাবি প্রক্টর ড. গোলাম রাব্বানীর ‘মদদে’ সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পাশাপাশি হামলা ঠেকাতে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে তারা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এ দাবি জানায়।

রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। তবে হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই হামলায় নুরসহ অন্তত ৩৪ জন আহত হন। হামলায় আহত ভিপি নুরসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মোট ৮ জন ভর্তি রয়েছেন। এ ঘটনার পর ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করা হলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে আসলে ঘ্টনায় জড়িত ছিল কারা? প্রক্টর গোলাম রাব্বানীর মদদে সিসিটিভি ফুটেজ সরানো হয়েছে। অথচ হামলার সময় পাঁচবার ফোন করেও প্রক্টরকে পাওয়া যায়নি। পরে তিনি ফোন রিসিভ করে গালাগালি শুরু করেন। শুরুতেই তিনি যদি এসে ব্যবস্থা নিতেন, আমাদের ওপর এমন নির্মমভাবে হামলা করতে পারত না। আমরা এই দালাল দলকানা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছি।’

রাশেদ আরও বলেন, আমরা নাটক করছি না, নাটক তারাই করছে যারা ছাত্রলীগের নামে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বানিয়ে অপকর্ম করছে। আমরা নাটক করলে মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতাম না। সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা রাশেদ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাছিম হাসপাতালে এসে বলেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের আটক করা হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি, মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের তিনজনকেই কেবল গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু মূল আসামি সনজিত ও সাদ্দামকে এখনও আটক করা হয়নি। অথচ আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, তাতে হামলায় সনজিত ও সাদ্দামের অংশগ্রহণ আছে। আমরা সেটি প্রকাশ করেছি। কিন্তু সনজিত-সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তথ্যপ্রমাণ থাকলেও তাদের ধরা হচ্ছে না।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আহত মশিউর রহমান বলেন, সনজিত ও সাদ্দামের নির্দেশে ছাত্রলীগকর্মীরা লাইট বন্ধ করে আমাদের ওপর হামলা করে। অথচ এখন পর্যন্ত মূল আসামি কাউকে আটক করা হয়নি। হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে এই হামলা ঘটত না।

মশিউর আরও বলেন, ছাত্রলীগের পদবীধারীরাই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নামে আমাদের ওপর হামলা করছে, যেন ছাত্রলীগের নাম না জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ প্রকৃতপক্ষে একই সংগঠন।

এক প্রশ্নের জবাবে মশিউর বলেন, আমরা জানতাম না পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। আর ভিপি নুরসহ আমাদের সহযোদ্ধারা সবাই আহত ছিলেন। আগে তো জীবন বাঁচাতে হবে। তারপরই না আইনের আশ্রয়। তবে আমরা গতকাল থানায় অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের মামলার সঙ্গে এই অভিযোগ সংযুক্ত করবে। কিন্তু আমরা চাই, আমাদের অভিযোগটি আলাদাভাবে মামলা হিসেবে দায়ের হোক।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ঢাবি প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। এছাড়া সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার, আহতদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করারও দাবি জানান তারা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের অবস্থা জানিয়ে রাশেদ খান বলেন, তুহিন ফারাবী আইসিইউতে ছিল। তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছিল। কিন্তু আজ (বুধবার) আবার তাকে এইচডিইউতে নেয়া হয়েছে। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য ও দেশবাসীকে দেখানোর জন্য তাকে কেবিনে নেয়া হয়েছিল। সোহেল গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে রাতে অপারেশন করা হয়। তার মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছিল। এটি অপারেশন না করলে তার অবস্থা আরও খারাপ হতে পারত। এছাড়া আরিফুল ইসলামের চোখে আঘাত রয়েছে। এখনও ঠিকমতো দেখতে পারছে না। আর ভিপি নুরের ছোট ভাই আমিনুর সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯)