কক্সবাজারে রাখাইনদের ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ উৎসব শুরু
কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারে ৩দিন ব্যাপী রাখাইনদের ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ বা ‘জলকেলী’ উৎসব শুরু হয়েছে। বৌদ্ধধর্মালম্বী রাখাইন সম্প্রদায় প্রতিবছর সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ পালন করে থাকে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে এলাকা ভিত্তিক শোভযাত্রা, এক ঘন্টা বাদক বিশেষ ঘন্টা বাজিয়ে কিয়াংসহ প্যান্ডেল পরিদর্শন, তরুণরা মাটির তৈরি কলসী ও পেছনে বয়স্ক নারী-পুরুষ ‘কল্প তরু’ বহনসহ নানা কর্মসূচী পালন করে।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় রাখাইনদের এ উৎসব শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, রাখাইন বর্ষকে বিদায় ও বরণে প্রতি বছর ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ আয়োজন করা হয়। রাখাইন পঞ্জিকা মতে বুধবার শেষ হয়েছে রাখাইন বর্ষ ১৩৭৫ সন। আর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে নতুন ১৩৭৬ রাখাইন বর্ষ।
কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের নেতা অধ্যক্ষ ক্য থিং অং জানান, ‘চৈত্র সংক্রান্তি থেকে রাখাইনদের বর্ষবরণ ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ উৎসব শুরু হয়ে চলে প্রায় সপ্তাহ জুড়ে। উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ‘পানি খেলা’ বা ‘জলকেলি’ বৈশাখের চতুর্থ দিন থেকে শুরু হয়। চলে ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত। এবারের ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসব চলবে ৪ বৈশাখ থেকে ৬ বৈশাখ পর্যন্ত। ইংরেজি তারিখের হিসেবে ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল।’
কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের তরুণ মং বা চিং রাখাইন জানিয়েছেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে রাখাইন বর্ষবিদায় এবং বরণে প্রতিবারের মতো ৭ দিনের বণার্ঢ্য আয়োজন শুরু হয়েছে। এ উৎসবের অংশ হিসেবে রাখাইনদের ভাষায় বলা হয় সাংগ্রেং পোয়ে বা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়েছে ১৩ এপ্রিল থেকে। প্রথম দিন ১৩ এপ্রিল পালিত হয় ‘ফারা রিসো পোয়ে’ বা বুদ্ধের স্নান উৎসব। ওই দিন রাখাইন শিক্ষার্থীরা বুদ্ধ মুর্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্নান করান। পুরোহিত, দায়ক ও শিষ্যদের সহযোগিতায় সুগন্ধ দ্রব্য ও চন্দনের পানি, নানা রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ধর্মীয় নানা আচারণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই মুর্তি ধুয়ে দেয়া হয়। উৎসবের ২য় দিন ১৪ এপ্রিল পালিত হয়েছে ‘রছা ফরা রিসো পোয়ে’ বা বাড়ির বুদ্ধের স্নান উৎসব। উৎসবের ৩য় দিন ও ৪র্থ দিন ১৫ এপ্রিল ও ১৬ এপ্রিল ২ দিনব্যাপী শিশু-কিশোরদের ‘সাংগ্রেং পোওয়ে’ চলছে। ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে “মাহা সাংগ্রেং পোয়ে”। সাংগ্রেং পোয়ে’র ৩ দিনের সমাপনী উৎসবকে তাদের ভাষায় বলা হয় “মাহা সাংগ্রেং পোয়ে”। ওই দিন সকালে এলাকা ভিত্তিক শোভযাত্রা বৌদ্ধ কিয়াং এ যাবে। কিয়াং থেকে শোভযাত্রাটি প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ায় আর পানি নিক্ষেপ খেলায় মেতে উঠবে। প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানো এসব তরুণদের নাচে গানে আনন্দের পাশাপাশি তাদের ঐতিহ্যবাহী পানীয় পান করবে। একে অপরকে পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে পুরাতন বছরের সকল পাপ, ক্লান্তি আর অসংগতিময়তা মুছে-ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে তাদের এ আয়োজন।
(টিটি/এএস/এপ্রিল ১৭, ২০১৪)