মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির একসময়ের ঘাটি হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের কারনে এমন খ্যাতি অর্জন করলেও উন্নয়নের এই মহা নায়কের মৃত্যুর পর দলটিতে তৈরি হয় অর্ন্তকোন্দল, গ্রুপ উপ-গ্রুপ।

কোন্দলের জর্জরিত নেতারা অবশেষে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও দলীয় ঐক্য ধরে রাখতে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে অনেকটা কাকতালীয়ভাবে একটেবিলে বসে ভিভাজনের রাজনীতি পরিত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ হতে সামর্থ হন। এমন পরিস্থিতি বিভক্ত বিএনপির হতাগ্রস্ত নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেন পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাহিরে থাকা দলটি বর্তমান সরকারের শাসনামলে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। রাজনীতির মাঠে অনেকটা কোনঠাসা অবস্থায় রাজপথের আন্দোলনে দলীয় কর্মসূচি পালনে দাঁড়াতে পারছেনা ঠিকমত, তার কারন পুলিশের কঠোর অবস্থান ও মামলা হামলার অজানা ভয়।

এমন প্রেক্ষাপটে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বিএনপি নেতা মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকীকে সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগে এনে গত ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ এম নাসের রহমানের বাহারমর্দনস্থ বাসভবনে দলটির জরুরী সভায় অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

মহান বিজয় দিবসের একদিন পূর্বে অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর রাতে জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হলে দলটির নেতাকর্মীসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। দলের চরম দুর্দীনে এমন ইন-আউটের খেলা বিএনপির রাজনীতিতে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে বলে জানা যায়।

অব্যাহতির বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী ঐ সময় জানান জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে আমাকে অব্যাহতি দেয়া দলীয় গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যা ভিপি মিজানুর রহমানের সাথে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন দলীয় গঠনতন্ত্রে (গ) ধারা অনুযায়ী কাউকে সরাসরি অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ নেই তবে শৃঙ্খলা বিরোধী অভিযোগ থাকলে জেলা কমিটি বসে সর্বসম্মতি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর বিধান রয়েছে। অব্যাহতির প্রকৃত কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন ঐদিনের সভায় আমি উপস্থিত ছিলামনা কাজেই বিষয়টি আমার জানা নেই।

এদিকে গত শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অব্যাহতির ঘটনার ১৬ দিন পর স্ব-পদ ফিরে পেলেন অব্যাহতি পাওয়া এই নেতা।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী বলেন, বেআইনী অব্যাহতির বিষয়টি আমি অবগত হওয়ার পর আমাদের লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান,দলের মহাসচিব ও সিনিয়র মহাসচিব বরাবর চিঠি দিলে পরবর্তীতে আমাকে কেন্দ্র থেকে দলীয় প্যাডে কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে স্ব-পদে বহাল রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তিনি বলেন আমি নিজেও জানিনা কিরকম শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে আর এই অভিযোগে জেলা বিএনপি আমাকে অব্যাহতি দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী।

এবিষয়ে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন এর সাথে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি ব্যস্থ আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান।

(একে/এসপি/ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯)