বাংলা ভাষা ও আমরা

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের রাজপথে মিছিলের দাবী ছিল
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।
বাঙালীর সার্বজনীন সেই দাবীকে স্তব্দ করে দিতে
শাসকদের বুলেট সেদিন ঝাজরা করে দিল তাঁজা বুক।

কিন্তু এতো কিছুর পরও,
মাথা নত করিনি আমরা
আরো তেজ দিপ্ত হলো আমাদের দাবী,
পেলাম প্রাণের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।

বায়ান্নর সেই চেতনায় আজ মরচে ধরেছে
কেননা, বাজারে কোন পন্য কিনতে গিয়ে
প্রথমেই দোকানীর কাছে জানতে চাই, বিদেশী কী প্রোডাক্ট আছে ভাই?
প্রশ্নটা তাও আবার ইংরেজী বাংলায় মিশিয়ে।

ইংরেজী বাংলায় বলা আজ প্রায় একশোতে একশজনই
অথচ মায়ের মুখের সেই বাংলা ভাষার জন্যে
সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকেই
ঢেলে দিল বুকের তাঁজা রক্ত রাজপথে।

রক্তে কেনা এই বাংলা ভাষার মর্যাদা
আজ আমরা ভুলেই যেতে বসেছি,
ভুলেই যাচ্ছি ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ
আর মন থেকে মুছে ফেলতে যাচ্ছি, একুশের সেই চেতনার কথা।

আমাদের যদি চোখ থাকতো ,
আমরা এসব দেখতে পেতাম
যদি কান নষ্ট না থাকত, মিশ্র,
ভাষায় কথা বলা শুনতে পেতাম।

আমাদের যদি মুখ থাকত তীব্র প্রতিবাদে
সেই বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতাম
আমাদের নাক, কান, চোখ, মুখ নেই বলেই,
আজ আমরা কিছুই করতে পারছিনা।

নদী ও মন

প্রকৃতির নিয়মেই নদী ও মন চলে নিরবধি
স্বাধীন ভাবে চলতে চলতে এই নদী যেমন সাগরে গিয়ে মিলে
তেমনি একটি মন চলতে চলতে আরেকটি মনে গিয়ে মিলে।

এই নদীর স্রোত যদি কখনো বেপরোয়া হয়
তখন তা উপছে পড়ে নদীর দুধারে
ক্ষতি করে অনেক ফসলের মাঠ।

তেমনি মনও যদি মস্তিষ্কের চেয়ে বেশি চলে
তখন বেপরোয়া চলতে চলতে বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতোই
সব প্লাবিত করে তছনছ করে ফেলে সমাজকে।

হে প্রভু, নদীও যেমন চলে তোমার ইশারায়
তেমনি মনও চলে তোমারই কথায়
তাই মিনতি করি, নদীকে চালাও তার গতি পথে।

নদী পথে, যেখানে নেই ফসলের মাঠ
আবার মনকেও চালাও আরেকটি
ভালো মনকে নিয়ে তোমাকে পাবার আশায়।

অবশেষে নদী আর মন এক হয়ে মিশুক অথৈই সাগরে
যে সাগরের জলে নেই কোন জাতের বিচার
যে জলে আছে সব মানুষের অধিকার।

লেখক : কবি ও সমকাল সাংবাদিক, সভাপতি, কেন্দুয়া উপজেলা প্রেসক্লাব, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা।