আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : পেঁয়াজ নিয়ে দেশের সমসাময়িক ঘটনার পর থেকে অন্যান্য অঞ্চলের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলেও এর উৎপাদন বৃদ্ধিতে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করেছে কৃষি বিভাগ। সরকারী প্রণোদনা ছাড়াও প্রজেক্টের মাধ্যমে পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। ফলে চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এক হাজার ১০৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় বরিশাল অঞ্চলেও পেঁয়াজ আবাদ এবং উৎপাদন হচ্ছে। তবে তা তুলনামুলকভাবে অনেক কম। পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুরে যে পরিমান পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে তার অর্ধেকও উৎপাদন নেই বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায়। পেঁয়াজ উৎপাদনে পিছিয়ে পরা বরিশাল অঞ্চলের প্রধান কারন হিসেবে পেঁয়াজ আবাদে উপযুক্ত মাটি না থাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি পেঁয়াজসহ মশলা চাষাবাদে চাষিদের অনাগ্রহকেও দায়ী করা হয়েছে।

সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় এক হাজার ১০৬ হেক্টর জমিতে মসলা জাতিয় দ্রব্য পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যারমধ্যে ভোলা জেলার লক্ষ্যমাত্র সব চেয়ে বেশি। ওই জেলায় মোট ৬১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল জেলায় ৩৫০ হেক্টর, পিরোজপুরে ৬০ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ৬১ হেক্টর, বরগুনায় ২০ হেক্টর এবং ঝালকাঠি জেলায় সর্বনিন্ম পাঁচ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। এসব জমিতে ইতোমধ্যে পেঁয়াজের চাষাবাদ সম্পন্ন করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিগত বছরের তুলনায় এবারের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে এ লক্ষ্যমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন। বিগত বছরে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার এক হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় ৩২০ হেক্টর, পিরোজপুরে ৪৯ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ৬১ হেক্টর, বরগুনায় ১৭ হেক্টর, ভোলায় সর্বোচ্চ ৬০৮ হেক্টর এবং ঝালকাঠি জেলায় সর্বনিন্ম দুই হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। গত বছর ছয় জেলায় মোট আট হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা জানান, সিন্ডিকেটের কারনে দেশের পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিদেশী পেঁয়াজ না আশায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুন। তাই নিজ দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের দিকে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে জেলা ভিত্তিক পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য কমে আসবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আফসার উদ্দিন বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত মাটি প্রয়োজন। যা আমাদের অঞ্চলে নেই। বেলে-দোয়াষ মাটি যেখানে কম্পষ্ট আছে এবং উঁচু জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হয়। তিনি আরও বলেন, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চল হলো নিচু জায়গা। যার কারনে এ অঞ্চলের মাটিতে কম্পস্ট কম এবং পানি বেশি থাকে। তাই এখানে পেঁয়াজের উৎপাদন কম। অথচ পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর জেলা উঁচু এবং পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত মাটি থাকায় সেখানে উৎপাদনও ভালো হয়। তাছাড়া বরিশাল অঞ্চলের চাষিদের পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রতি আগ্রহ কম।

আফসার উদ্দিন বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সে ভাবেই আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করছি। পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকারী সহায়তা ছাড়াও ১৮টি প্রজেক্টের মাধ্যমে পেঁয়াজসহ মশলা জাতিয় দ্রব্য উৎপাদনে কাজ করছি। সরকারের এ উদ্যোগের কারনে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় দক্ষিণাঞ্চলেও পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি আশবাদী।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯)