স্টাফ রিপোর্টার : গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর। আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে রিলিজ দেয়। পরে হাসপাতাল ত্যাগ করার সময় সাংবাদিকদের কাছে এ আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

ডাকসু ভবনে হামলার শিকার হয়ে এতদিন ঢামেকে ভর্তি ছিলেন ভিপি নুর। আজ দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। ছাড়া পেয়ে হাসপাতাল ভবনের নিচে ভিপি নুর সাংবাদিকদের বলেন, আমার ডাকসুর মেয়াদ আর তিন মাস বাকি আছে। ইতোমধ্যে আমার নামে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা দেয়া হয়েছে। আমাকে যাতে অ্যারেস্ট করা হয়, আমি যাতে জামিন না পাই, সেজন্য তড়িঘড়ি করে আমাকে রিলিজ দেয়া হয়েছে।

ভিপি নুর বলেন, ঘটনার দিন লাইট বন্ধ করে আমাদের মারধর করে ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত ও সেক্রেটারি সাদ্দাম। তারা আমার ভাই আমিনুরকে পিস্তলের বাট দিয়ে মেরে তিন তলা থেকে ফেলে দেয়। অন্যদেরকেও এভাবে মেরেছে। সরকারের দুঃশাসন ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কথা বলায় আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে।

তিনি বলেন, আমি হাঁটতে পারি না, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারি না। কাশি দিলে পাঁজরে ব্যথা পাই। মাথা ঘোরে, চোখে ঝাপসা দেখি। আমার চিকিৎসার ব্যাপারে সন্দেহ আছে। আমাকে মেরে ফেলার জন্য আটবার হামলা করা হয়েছে। এগুলো করা হচ্ছে সরকারের ইশারায়।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ যেভাবে হামলা করেছে যদি এদের বিচার না হয়, তাহলে অন্য সরকার আসলে এভাবেই চলতে থাকবে। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের যেন বিচার হয়। ছাত্রলীগকে নিয়ে যেভাবে সাফাই গাওয়া হচ্ছে…আমাকে মেরে ফেলার যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র।

এগুলো সরকারের ইশারাতে হচ্ছে বলে মনে করেন ভিপি নুর। তিনি বলেন, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে কয়েকবার মারধরের ঘটনা হয়েছে। এগুলোর কোনো বিচার হয়নি। সরকারের বিরুদ্ধে এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমার ওপর হামলা হচ্ছে। কথা না বলার জন্য নেতা ও গোয়েন্দারা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, মৃত্যু নিশ্চিত করতে আমার ওপর প্রলোভন দেখিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, মৃত্যু নিশ্চিত করতে আমার ওপর বারবার হামলা করা হচ্ছে। মামলা করতে গেলে (পুলিশ) মামলা নেয়নি। পরে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো।

এদিকে, আহতদের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডের প্রধান নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিউল হক বলেন, ভিপি নুরকে ছুটি দেয়া হয়েছে। গতকাল তার কাছে ছাড়পত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া নাজমুল, ফারাবী ও ফারুককে ছাড়পত্র দেয়া হবে। তিনি বলেন, তাদের অবস্থা ভালো আছে। কোনো সমস্যা হলে ফলোআপে আসতে বলা হয়েছে। এছাড়া নেফ্রোলজি বিভাগে সোহেল ও আমিনুর আছে।

গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালায়- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। তবে হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই হামলায় নুরসহ অন্তত ৩৪ জন আহত হন। হামলায় আহত ভিপি নুরসহ অন্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ৮ জন ভর্তি হন।

হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ ও ডাকসুর ৩৭ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভিপি নুর। তার পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।

অপরদিকে ওই ঘটনায় নুরকে দায়ী করে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের ছাত্র ডি এম সাব্বির হোসেন। ২৬ ডিসেম্বর করা ওই মামলায় নুরসহ ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯)