মাহবুব আরিফ


আমাদের তো একটি অসাম্প্রদায়িক ভারতবর্ষেই একত্রে বসবাস করার কথা ছিল। কারণ এটাই তো ছিল আমাদের পূর্ব পুরুষদের জীবন ধারা! তবে আজ আমাদের এই হাল হলো কেন? কেনই বা সাম্প্রদায়িকতার এই বিষ বাষ্প? আজ বাংলাকে ভাগ করা না হলে শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও সাহিত্যে আমরা থাকতাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি।

১৯৪৭ এর অপ্রয়োজনীয় এই বিভাজনের একমাত্র কারণ বলে কিছুই নেই। ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ১৯৪৮ সালের ৩০শে জুনের আগেই তারা ভারতবর্ষের নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাবে। আর সেই হস্তান্তরকে তরান্বিত করতেই জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। বাধা আসে প্রথম মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে। যদিও পরে মুসলিম লীগ অনেক আলোচনার পর ১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেয়।

ব্রিটিশ সরকারের নিয়োগ করা কেবিনেট মিশনের লক্ষ্য ছিল পুরো ভারতবর্ষকে অখণ্ড রেখে বিভিন্ন অঞ্চলে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার মাধ্যমে ভারতকে স্বাধীনতা দেয়া। এ বিষয়ে তখনকার প্রেসিডেন্ট মৌলানা আবুল কালাম আজাদের সাথে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের পর পর বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়। এরই মধ্যে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা জওহরলাল নেহেরু ও মুসলিম লীগের মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। শুরু হয় চরম রেষারেষি!

আসাম এবং বাংলা একসাথে থাকবে কি-না এ নিয়ে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে তীব্র মত-পার্থক্য শুরু হলো। ভারতবর্ষের নেতা মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী ছিলেন মৌলানা আজাদের শেষ ভরসা। কিন্তু তিনিও খুব যে একটা সফল হয়েছিলেন তা বলা যাবে না। কারণ এই বিভাজন করম চাঁদ গান্ধীও ঠেকাতে পারেননি। নানা বিষয় নিয়ে মুসলিমলীগ ও কংগ্রেসের মতের মিল না হওয়াতে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক খারাপের দিকে যাচ্ছিল। কলকাতায় দাঙ্গার পর হিন্দু-মুসলমান সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে নোয়াখালী ও বিহারে। ভারত বর্ষের নেতা সুভাষ বোস ছিলেন করম চাঁদ গান্ধীর চক্ষুশূল। তাই ওই নেতাও নাটকের মূল পর্বে ভূমিকা রাখতে পারছিলেন না। নেতা সুভাষ বোস অনেক আগেই নাটকের পর্বের বাইরে চলে গেছেন।

লর্ড মাউন্টব্যাটেনের গোঁয়ার্তুমির কারণেই মৌলানা আজাদ তার উপর অর্থাৎ লর্ড মাউন্টব্যাটেনের উপরই সকল সিদ্ধান্তের ভার দিয়ে দেন। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের উচিত ছিল হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের একটা সুন্দর সমাধান এনে অখণ্ড ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দেয়া। লর্ড মাউন্টব্যাটেন লোকটি ছিল খুবই চতুর প্রকৃতির, তাই মৌলানা আজাদ তার বইতে লিখেছেন, 'লর্ড মাউন্টব্যাটেন উভয়পক্ষকে খুশি রাখতে চেয়েছিলেন এবং উভয়পক্ষকে বুঝিয়েছিলেন যে পাকিস্তানের সৃষ্টি না হয়ে উপায় নেই। মাউন্টব্যাটেন কংগ্রেসের সিনিয়র নেতাদের মনে পাকিস্তান সৃষ্টির বীজ বপন করেছিলেন। আর ভারতীয় নেতাদের মধ্যে সরদার প্যাটেল মাউন্টব্যাটেনের এ ধারণা সবার আগে গ্রহণ করেছিলেন।' এই দুই জনই ছিল ভারতবর্ষকে বিভক্তি করনের মূল হোতা! এদের কারণেই যুগের পর যুগ এই ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতার ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকবে! ব্রিটিশ সরকার চাইলেই ভারতবর্ষকে অখণ্ড রাখতে পারতো! কিন্তু তা আর হলো কই; আসলেই আমরা বড়ই দুর্ভাগা!

লেখক : সুইডেন প্রবাসী।