মানিক বৈরাগী


গেলো বছর গত হলো সবেমাত্র দু'দিন চলছে। শুরু হয়েছে মুজিব বর্ষ। গেলো বছরের ক্রান্তিলগ্নে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আওয়ামীলীগ ও সরকারের সঙ্গতি অসঙ্গতি নিয়ে আর কিছুই লিখবো না। খামোখা শত্রু বাড়িয়ে লাভ নেই। পুরনো শকুনেরা নিজ দলে সুসংগঠিত ও সুসংহত অবস্তায় থেকে গোপে গাওয়া ঘি মাখছে।ওরা খুব সহজেই আমাগো নেতাদের খুব আপন ও লাঠ্যাল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে আমার দুর্দিনের মিছিলের সারথিদের বিরুদ্ধে। এসব কারণে রাজনৈতিক তবুও বছরের শুরুতে এই শোকের ভার সহন দায় ও কঠিন। তাই দু'কলম না লিখে আর পারলাম না।

বর্তমান সরকার ব্যবস্থাপনায় দেখলাম কত বিএনপি নেতা সরকার থেকে চিকিৎসা ভাতা নিচ্ছেন। কত ছাগল বলদ শিয়াল কুকুরকেও সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে বিদেশে চিকিৎসার নামে। এক কাউয়া সরদারের জন্য কত মায়া। কত কুটি টাকা খরচ করা হলো। শুধু বাপ্পি আপা ঝুমু আপারাই অপরাধী। কারণ সে সংসদ ও রাজপথে সরব ছিলো। বর্তমানে বাপ্পি আপা তো এমপিতে ও নেই। তো অত মাথা ব্যাথার দরকার নেই। মরলে শোক বার্তা পাঠিয়ে দিলে চলবে।

আবেগী আওয়ামীলীগ তো ফেইসবুক ফাটাই ফেলবে লিখতে লিখতে। তো অত চিন্তার দরদ কি। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই উন্নত করেছে। বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন নেই। ক'দিন পূর্বে রাজপথের আর এক লড়াকু আপা বিনা চিকিৎসায় মারা গেলো। ঝুমু আপার মৃত্যুর পরও কত মায়া কান্না। বিএনপি জামাত যখন মাঝে মাঝে আন্দোলনের হুংকার দেয় তখন বিগত বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ে নির্যাতিত সাধারণ আওয়ামী লীগের কর্মীদের ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গরম করতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পেইজ থেকে। কিন্তু তাদের জীবন যে এখন দুর্বিষহ মরণযন্ত্রনার পাশে কাউকে দাঁড়াত দেখলাম না। আরো আশ্চর্যের বিষয় তা হলো তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকার অনুদানের চেক হাতে ধরিয়ে দিয়ে তারও অধিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ফলাও করে ছাপা হয়।

এমনো যে দলটির গুন্ডাপান্ডারা দুর্দিনের নির্যাতিত আওয়ামী কর্মীর হাত পা কেটে নিলো তারাই আবার নেতা ও এমপির পাশে দাঁড়িয়ে খিলখিলিয়ে হেসে অনুদানের চেক বিতরণ সভায় ছবি তুলে পত্রিকায় নিজ গরজে বিজ্ঞাপন ছাপে। এ রকম অবস্থা কিন্তু ৭৪ থেকে ৭৫'র এ ও ঘটেছিলো।

আর এসব দেখে আমার সোভিয়েত রাশিয়ার সর্বশেষ ভাইস প্রেসিডেন্ট বরিস ইলিয়েৎসিন এর কথা মনে পড়লো। তার তত্ত্বাবধানেই সারা বিশ্বের বিপ্লবী কমিউনিস্ট যেসব নেতা সোভিয়েত ইউনিয়নে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলো তাদের প্রত্যেককেই ক্লিনিক্যালি হত্যা করা হয়েছিলো। এবং সারা বিশ্বের সম্ভাবনাময় বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতাদের সর্দি হলেই কেজেবির লোক এসে সোভিয়েতে চিকিৎসার অফার করতো। খরচ তো রাশিয়া সরকারের।

ঠিক একি ভাবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি কমরেড ফরহাদ কেও ক্লিনিক্যালি হত্যা করা হতে পারে বলে অনেকেই ধারনা করছেন। মিখাইল গর্বাচেভ ও বরিস ইলিয়েৎসিনের সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কয়েক লক্ষ বিপ্লবী নেতাকে হত্যা করা হয়েছে বলে বিবিসি, ডয়েচে ভেলে সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন খবর অনেক আগেই পড়েছিলাম।

সেদিন ফেইবুকে দেখলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এখন ডাক্তার থেকে আয়া পর্যন্ত জামত বিএনপির ক্যাড়ারদের পদায়ন করে সাজানো বাগানে পরিনত করা হয়েছে। তারা উপরে সবাই এক এক জন কঠিন কঠিন আওয়ামীলীগার। এমন কি ডাক্তারদের সংগঠন স্বাচিব পর্যন্ত তাদের দখলে। তো বাপ্পি আপা সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই বাপ্পি আপাকেই তো সংসদে বক্তব্যরত অবস্থায় সাবেক ছাত্রদল নেতা হামলা করতে উদ্যতমুষ্টি আঙ্গুল তুলে।

পিজিতেই রয়েছে এনির বহুক্যাডার। আমি বলছিনা বাপ্পি আপার চিকিৎসার অবহেলা বা অন্যকিছু হয়েছে। কিন্তু আমি যে ঘর পোড়া গরু, মেঘ দেখলেই ভয় পাই। তবে আপাকে দ্রুত সময়ে আমাদের দাবি অনুযায়ী বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যেতো। মনে সান্তনা পেতো।

যা হোক বর্তমান সরকারের অনেক গুলো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে আইনজীবী হিসাবে ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি আপা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। এসব কাজের জন্য আপাকে বাংলাদেশের মুজিববাদী মুক্তিযুদ্ধের চেতনবাবাহী জনতা চিরস্মরণীয় করে রাখবেন।

আমি দোয়া করি আল্লাহ পাক রাব্বুল ইজ্জত রাহনুমার রাহিম বাপ্পি আপাকে যেনো বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থান জন্নাতুল ফেরদৌস এ দাখিল করেন। আমেন।


লেখক : কবি ও নব্বইয়ের নির্যাতিত প্রগতিশীল ছাত্রনেতা, কক্সবাজার।