রূপক মুখার্জি , নড়াইল : স্বাধীতার ৪৮ বছর পার করে ৪৯ বছরে পা দিয়েছে বাংলাদেশ। একে একে ৪৮টি বিজয়ের মাস অতিবাহিত হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা লোহাগড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আজও তৈরি হয় নাই। এ কারনে  মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ আব্দুস ছবুর। তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করবার জন্য ১৯৭১ সালে ভারত থেকে ট্রেনিং শেষে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্দুস ছবুর বলেন, অনেক সহযোদ্ধা আছেন। যারা এখনও রাষ্ট্রীয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি। আমাদের প্রাণের দাবি, বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা দ্রুত প্রকাশ করবেন সরকার।

কাজী আকবর হোসেন। তিনি ইতনা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। সর্বশেষ সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই কার্যক্রম নিয়ে বলেন, “যতদুর শুনেছি সরকার কর্তৃক যে নীতিমালা এসেছে, সেই মতে সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা যতই হোকনা কেন ২০১৭ সালে প্রেরিত তালিকা থেকে শতকরা ১০ ভাগের বেশি মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা পাঠানোর সুযোগ নেই বর্তমান যাচাই বাছাই কমিটির। ফলে এখনও অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে রয়ে গেছেন। তবে এ কার্যক্রমের অবসান হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই করতে ৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটি তথ্য যাচাই বাছাই করে ৬৪৭জন মুক্তিযোদ্ধাদের নাম নতুন ভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকা ভুক্ত করতে সুপারিশ পাঠায় জামুকায়। পরে ওই তালিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি হলে গত ৩০ অক্টোবর থেকে পুরনায় তথ্য যাচাই বাছাই শুরু করেন তিন সদস্যের নতুন কমিটি। নতুন কমিটিতে যুদ্ধকালীন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুকুল কুমার মৈত্রকে সদস্য সচিব এবং মুক্তিযোদ্ধা শিকদার মাহফুজুর রহমান সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কথা হয় সর্বশেষ যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার মো. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত নীতিমালা অনুসরন করে যাচাই বাছাই কার্যক্রম শেষ করেছি। পুর্বে বাছাইকৃত ৬৪৭ দাবিদার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে স্বচ্ছতার মাধ্যমে ১৭১ মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা প্রকাশ করেছি। উপজেলার প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন কমিটির সদস্যরা। তার পরও স্বাধীনতার বিপক্ষের কিছু লোক চলমান প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্থ করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের এ অপপ্রচারের তীব্র নিন্দাও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে নড়াইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও লোহাগড়ার পাঁচুড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক কচি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামীলীগ দীর্ঘ ১১ বছর ক্ষমতাসীন রয়েছে, অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা আজও প্রকাশ হলো না। এটা দুঃখজনক, লজ্জার। তিনি আগামী ২৬ মার্চেই মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের জন্য দাবি জানান।

(আরএম/এসপি/জানুয়ারি ০২, ২০২০)