স্টাফ রিপোর্টার : সরকার কর্তৃক নির্ধারিত খরচে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। সিন্ডিকেটের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া এ বাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি চাই না, আগের মতো ৪-৬ লাখ টাকা খরচ করে কর্মী মালয়েশিয়ায় যাক। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা সিন্ডিকেট নয়, নির্ধারিত খরচে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করা। এটা আমার প্রধান লক্ষ্য। এটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার খুলতে আমি রাজি না।’

রবিবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টস (আরবিএম) আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমি চাই না, আগের মতো ৪-৬ লাখ টাকা খরচ করে কর্মী মালয়েশিয়ায় যাবে আর জঙ্গলে লুকিয়ে বেড়াবে। আমরা ওই ধরনের কোনো চুক্তি করব না। আমাদের টার্গেট হলো, সরকার যে রেট ঠিক করে দেবে, সেই রেটেই মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের পাঠাতে হবে। আমি অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না। আমাদের অ্যাম্বাসি এ নিয়ে কাজ করছে। আমরা এখানে বসেও কাজ করছি।’

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, শ্রমিকরা নির্ধারিত রেটে কীভাবে যেতে পারে? এটা হলো আমার প্রাইম টার্গেট। এ জায়গা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমি কিন্তু মার্কেট খুলতে রাজি না। তা নাহলে সব দায় আমি এবং সরকারের ওপর আসবে। শ্রমিকদের ওপর যে অতিরিক্ত টাকার চাপ ফেলা হয়, এটা যদি আমি গ্রহণ করি তাহলে কিন্তু তাদের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।’

কর্মী কম যাওয়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রী বলেন, ‘সারাবিশ্বে চাহিদার পরিবর্তন এসেছে। এখন দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেশি। সে চাহিদা পূরণ করতে না পারলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। এ কারণে দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে আমরা নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। দক্ষ কর্মী তৈরি আমাদের প্রধান লক্ষ্য। কারণ দেশেও দক্ষ কর্মী প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়া, জাপান আমাদের কাছে আইটিতে দক্ষ কর্মী চায়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। দেশের তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। আমরা ভাষাগত দক্ষতায় পিছিয়ে থাকায় জাপানে চাহিদা থাকলেও কম লোক পাঠাতে পারছি। ভাষা জানলেই এক থেকে দেড় লাখ টাকা বেতনের চাকরি দিচ্ছে জাপান।’

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, দক্ষ কর্মী তৈরিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে দক্ষতা উন্নয়ন, প্রাক বহির্গমন ও হাউজ কিপিং কোর্সে ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ৪১টি উপজেলায় টিটিসি স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ৬০টি উপজেলায় ৬০টি টিটিসি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এক লাখ দক্ষ ড্রাইভারকে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘অভিবাসন ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিরাপদ অভিবাসন, প্রতারণা রোধে ও অভিবাসী কর্মীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট ও আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সের ২১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং ২০ লাখ ১৮ হাজার টাকা জরিমানা এবং চার জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গত এক বছরে ২১৪টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ সময়ে ক্ষতিপূরণপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা ৩৫২ জন। এছাড়া ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে তিন কোটি ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। বিদায়ী বছরে একটি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল দুইটির স্থগিত এবং ১৭২টির সার্ভার লক করা হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শামসুল আলম, রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টসের (আরবিএম) এর সভাপতি ফিরোজ মান্না, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০২০)