আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : প্রেম করে বিয়ের অপরাধে মেয়ের মায়ের সাজানো মামলায় দীর্ঘদিন যাবত হাজত বাস করছে আগৈলঝাড়ার দিনমজুর যুবক বরকত হাওলাদার। আদালতের আশু দৃষ্টি কামনা করে ন্যায় বিচার জামিনের মাধ্যমে বরকতের মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।

ভুক্তভোগীর পরিবার, ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদারের ছেলে দিন মজুর বরকত হাওলাদার এর সাথে পাশ্ববর্তি বাড়ির আক্কাস হাওলাদারের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে নাসরিন আক্তারের সাথে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো।

প্রেমের সম্পর্কের কারনে তারা নিজেদের ইচ্ছায় ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পালিয়ে উপজেলা বিএনপি প্রয়াত সভাপতি আব্দুল লতিফ মোল্লার গৈলা গ্রামের বাড়িতে বসে মেয়ের বাবা আক্কাস হাওলাদার ও মা মমতাজ বেগমের উপস্থিতিতে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ি বিয়ে হয়।

বিয়ের আইনগত স্বীকৃতির জন্য ওই দিন বরিশাল বিজ্ঞ নোটারী পাবলিক ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের কৌসলী আবুল খায়ের মো. শফিউল্লাহর মাধ্যমে বিয়ের হলফনামা সম্পাদন করে তারা। যার ক্রমিক নম্বর ৩৮৬৫।

এদিকে মেয়ে বিয়ের আগেই পূর্ব আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে নাসরিনের মা কুট-কৌশলী মমতাজ বেগম বরকতের বাবা ভাসুর জালাল হাওলাদারের কাছ থেকে জমি ক্রয়ের কথা কথা বলে স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে পাঁচ লাখ টাকা ধার নেয়। ওই ধারের টাকা আদায়ের জন্য মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেন বরকতের বাবা জালাল হাওলাদার।

মেয়ে নাসরিনকে বাবার বাড়ি বেড়াতে এনে অতি গোপনে নাসরিনের মা মমতাজ বেগম হলফ নামার উল্লেখিত তারিখে (৩.৯.১৮) বিদ্যালয়ে যাবার পথ তার মেয়ে নাসরিনকে অপহরনের পর ধর্ষণ করা হয়েছে মর্মে ধার করা পাঁচ লাখ টাকা ফেরত না দেয়ার উদ্দেশ্যে বিয়ের ২২দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে পাতানো নালিশী অভিযোগ দায়ের করেন, যার নং ১৯৭।

ওই মামলায় অপহরণকারী হিসেবে মেয়ে জামাতা বরকত, তার বাবা জালাল হাওলাদার, মা মোসাম্মৎ পারুল বেগম, বরকতরে বড় ভাই রুবেল হাওলাদার, ভাবী পপি বেগম, বোন আরজু বেগ ও চাচা কামাল হাওলাদারকে আসামী করেন নাসরিনের মা মমতাজ বেগম।

আদালতের বিজ্ঞ বিচারক অভিযোগ তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ঠ রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইরিয়াস তালুকদারকে নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশের প্রায় পাঁচ মাস পরে ২০১৯ সালের ১৮ফেব্রুয়ারি ২০১৯/০৪নং স্মারকে রাজিহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস তালুকদার আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ঘটনার দিন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াতে গিয়ে বরকত ও নাসরিন স্বেচ্ছায় গিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পরে বরকত ও নাসরিন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে গ্রামে আসলে বরকতের বাবা স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ভুড়ি ভোজ করিয়ে সামাজিকভাবে বিয়ে নাসরিনকে পুত্রবধু হিসেবে মেনে নেন।
তদন্তে মেয়ে অপহরনের ঘটনায় থানা মামলা নেয়নি বললেও মুলত বাদী ওই ঘটনার জন্য থানায় কোন মামলাই করতে যায় নি।

নাসরিনকে অপহরণের কোন সত্যতা না পেয়ে ওই রিপোর্টে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের ওসিসি’তে ভিক্টিমের কোন চিকিৎসারও প্রমান পাননি চেয়ারম্যান। তদন্ত প্রতিবেদনের পরে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নেয়, যার নং২৬৮/১৯। আদালত ওয়ারেন্ট ইস্যু করলে পুলিশ বরকতকে গত রোজার সময় গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।

আদালতের দায়ের অভিযোগের সত্যতা না থাকলেও অজ্ঞাত কারণে জামিন মুক্ত হতে পারছে না বরকত। সূত্র মতে, ১১বার আদালতে জামিন প্রার্থনা করলেও আদালত জামিন না-মঞ্জুর করায় শাশুরীর সাজানো মামলায় আট মাস পর্যন্ত জেল হাজতে বাস করছে দিনমজুর প্রেমিক বরকত।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০২০)