চৌধুরী আ. হান্নান : রাতের অন্ধকার অপ্রত্যাশিত নয়, কারণ একটু পরেই দিনের আলো ফুটবে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার সনদ বিক্রি করে মুনাফা অর্জন এবং মুক্তিযুদ্ধের জাল সনদ সংগ্রহ করে অবৈধ সুবিধা জাতির সামনে আর এক অন্ধকার-কলঙ্ক। এ অন্ধকার দূর হবে কীভাবে?
আলো জ্বেলেছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাজ্জেম হক।

তিনি বলেন ‘যারা মুক্তিযোদ্ধা নন তারা কেন মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিবেন?’ গর্বে বুক ভরে যায়। যে সরকারে এমন মন্ত্রী আছেন সে সরকার দ্রুত জনবান্ধব হয়ে উঠবে। তবে কথা ও কাজের মিল দেখার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।
১৫১ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করা হয়েছে। তারা চাকুরীর বয়স বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন। ভুয়া সনদের বদৌলতে গৃহীত সুবিধা ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে মন্ত্রী মহাদয় জানিয়েছেন। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে জাল সনদ তৈরি ও বিতরণের সাথে যারা জড়িত তার প্রধানত অর্থের বিনিময়ে এ কাজ করেছে। এ প্রক্রিয়ায় যাদের অর্থ প্রাপ্তি ঘটেছে তাদের নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই। আমাদের মনোযোগ তাঁদের প্রতি যাঁদের চরম ও পরম ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের অমূল্য স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই স্বাধীন ভূ’খন্ড মুক্তিযোদ্ধাদেরই অবিস্মরণীয় দান। আমাদের মনে রাখা জরুরী যে তাঁদের যে কোন ধরণের সুবিধা দেয়া মানে জাতীয় বীরকে সম্মান প্রদর্শন করা। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যথাযথ সম্মান দেকানো তো দূরের কথা, স্বাধীনতার চার দশক পরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁদের সন্তান মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যাঁদের ত্যাগের জন্য আমাদের স্বাধীনতা তাঁদের করুন জীবন গাঁথা প্রত্যক্ষ করলে লজ্জায় মুখ লুকাতে হয়।
ভুয়া সনদ নিয়ে যে দাঁড়কাকের দল ময়ূর সেজেছে তারা অনেকেই এখন অফিসের বস। তাদের মুখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে হয়। প্রকৃত যোদ্ধরা তা কান খুলে শুনে আর মনে মনে ভাবে-হায়! নিয়তির কী-পরিহাস! দাঁড়কাকদের কঠিন বিচার প্রত্যাশা করা যায় না। তা করতে গেলে হয়তো কোনো বিচারই হবে না। এ দুর্নীতির শিকর খুঁজতে গেলে হয়তো মাঝ পথে তদন্তই থেমে যাবে। তবু এটাই বা কম কিসে যে, ভুয়া সনদধারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, সনদ বাতিল হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মহোদয়ের উদ্যোগে আমরা আশার আলো দেখি। মনে হয় কোথাও কেউ আছে যে দীপ জ্বালিয়ে রাখবে।
এখন শেখ হাসিনার সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়নের উপযুক্ত সময়। মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নয়-জীবিত কালে ‘বেঁচে’ থাকতে চাই। মুক্তিযোদ্ধাদের এ আকুতি আমরা কান পেতে শুনি। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-পরিষদের সদস্যগণ পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে সৎ ও যোগ্য-এমন বিশ্বাস জনমনে রয়েছে।
গত বছরের শেষ দিকের রাজনৈতিক বিভীষিকার কথা মানুষ আর ভাবতে চায় না। বর্তমানে দেশে কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। জন কল্যাণ মূলক কাজ করে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল সনদ বিক্রিসহ নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কঠোর অবস্থান নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী আলো জ্বালানোর যে প্রত্যয়ে অগ্রসর হচ্ছেন, সে আলো সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক এ প্রত্যাশা আমাদের।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

(এএস/আগস্ট ০৬, ২০১৪)