রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : নামের আংশিক মিল থাকায় ইচ্ছাকৃতভাবে এক নিরীহ ব্যক্তিকে পুলিশ জেলে পাঠালেও আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে।  বাগেরহাটের আমলী প্রথম আদালতের বিচারক সমীর কুমার মল্লিক বাদির লিখিত জবানবন্দি ও উভয় পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনানী শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টায় তাকে বেকসুর খালাস দেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, প্রদীপন মানবিক উন্নয়ন সংস্থার তৎকালিন মোল্লারহাট ও চিতলমারি উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক রবিউল হক ছয় লাখ ২৩ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরেও টাকা ফেরৎ দেয়নি সে। বাধ্য হয়ে প্রদীপন মানবিক উন্নয়ন সংস্থার তৎকালিন বাগেরহাট জেলার ও বর্তমানে খুলনা বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল আহম্মেদ চৌধুরী বাদি হয়ে ২০১০ সালের ১৮ মে সাতক্ষীরা শহরের কাছারিপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও খুলনার বানরগাতির হাজী ইসমাইল রোডের ভাড়াটিয়া ডাঃ আনোয়ারুল হকের ছেলে রবিউল হক এর নামে বাগেরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সিআর-৭৯/১০ নং মামলা করেন। ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আমলী প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ রেজোয়ানুজ্জামান আসামীকে দু’ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ২০১৮ সালের পহেলা মার্চ রবিউল হক এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুরের রুহুল আমিন অভিযোগ করে বলেন, রবিউল হক কে কাছারিপাড়ায় না পেয়ে তার ভাই এসএম রবিউল ইসলামকে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাদের বাড়ির পাশ থেকে গ্রেপ্তার করেন কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন। গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসএম রবিউল ইসলামই রবিউল হক । ভোটার আইডি কার্ড, নাগরিক সনদপত্র, পৌরসভার পানির বিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্রাদি নিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি তার ভাই এসএম রবিউল ইসলামকে রবিউল হক বলে ১২ ডিসেম্বর আদালতের মাধ্যমে সাতক্ষীরা কারাগারে পাঠান। ১৩ ডিসেম্বর তাকে বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এসএম রবিউল ইসলামের ভাই রহুল আমিন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তার ভাই এর নামের সঙ্গে রবিউল হক এর নাম, বাবার নাম ও ঠিকানার গড়মিল রয়েছে। তার ভাই প্রদীপন মানবিক সংন্থা কেন কখনো কোন এনজিওতে কাজ করেননি বা খুলনার বানরগাতিতে থাকেনি। তার ভাইকে হয়রানিমূলক গ্রেপ্তারের বিষয়টি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানকে বারবার অবহিত করা হলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।বাধ্য হয়ে হয়রানিমূলক গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন তিনি।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরার কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির সহকারি উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দি ঘটনার সত্যতা অস্বীকার না করেই বলেন, সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শকের মাধ্যমে বাগেরহাট আদালতের পুলিশ পরিদর্শককে যততাড়ি তাড়ি হয় এসএম রবিউল ইসলামকে জামিন করিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

বাগেরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত পহেলা জানুয়ারি এসএম রবিউল ইসলামের জামিনের জন্য বাগেরহাটের আমলী প্রথম আদালতে আবেদন করা হয়। সেখানে রবিউল হক ও এসএম রবিউল ইসলাম যে একই ব্যক্তি নয় তা আদালতকে কাগজপত্র ছবির মাধ্যমে অবহিত করা হয়। ফলে বিচারক সমীর কুমার মল্লিক মামলার বাদি অথবা তার পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে জামিন শুনানীর জন্য গত ৬ জানুয়ারি সোমবার দিন ধার্য করেন।

আদালত শুনানীকালে বাদির উপস্থিেিততে শুনানীর জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী মামলার বাদি কামাল আহম্মেদ চৌধুরী গ্রেপ্তারকৃত এসএম রবিউল ইসলাম তার দায়েরকৃত মামলার আসামী নন বা তিনি কোন দিনও তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেননি বলে আদালতকে লিখিতভাবে অভিহিত করেন। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের শুনানী শেষে এসএম রবিউল ইসলামকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। তবে এ প্রতিবেদন লেখার সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাকে বাগেরহাটের জেলা কারাগার থেকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছিল।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০৭, ২০২০)