নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের ঢুষপাড়া আকবরপুর গ্রামে জ্বীনের হাতে তুলে দেওয়ার নামে পাঁচ বছরের শিশু সন্তান হোসাইনের উপর নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক মা। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত দশটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মায়ের নাম রানু বেগম (৩৫)। প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনেরা শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে।

লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রাজ্জাক ও থানার অফিসার্স ইনচার্জ সেলিম রেজা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বুধবার সন্ধ্যায় শিশুটির নানা আমজাদ হোসেন ও মামা মিলন হোসেনকে থানায় ডেকে নেন পুলিশ।

প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, শিশু হোসাইনের মা রানু বেগম একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী। সম্প্রতি হোসাইনকে নিয়ে তিনি বাবার বাড়ি আকবরপুরে বেড়াতে আসেন। সেখানে গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রানু বেগমের কাছে তার একমাত্র ভাই মিলনকে কথিত জ্বীন নিয়ে যেতে চাইলে ভাইয়ের পরিবর্তে নিজ সন্তান হোসাইনকে দিয়ে দিতে চান তিনি। তবে ছেলেকে জ্বীনের কাছে দিলে হত্যা করে দিতে হবে-এমন বিশ্বাসে হোসাইনকে হত্যার চেষ্টা করেন রানু বেগম। শুরু হয় শিশু হোসাইনের উপর আদিম বর্বরচিত নির্যাতন। ওই দিন সন্ধ্যায় প্রথমে হোসাইনকে বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে মারার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন রানু বেগম।

এরপর রাতভর হোসাইনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ছেঁকা, পেরেক দিয়ে সারা শরীর খামচানো, লাঠিপেটা এবং সর্বশেষ পাকা দেয়ালের সাথে মাথা চেপে ঘষা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন তিনি। বুধবার সকালে আবারও নির্যাতন শুরু করলে হোসাইনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে মারধর বন্ধ করতে মাকে অনুরোধ জানায়। অনুরোধ না শুনলে একপর্যায়ে দরজা ভেঙ্গে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নির্মম নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে।

লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, মায়ের দ্বারা এমন নির্যাতনের কারণে শিশু হোসাইন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য কফিল উদ্দীন জানান, বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে সে রানু সন্তানের উপর নির্যাতন চালাতে পেরেছে। এই কাজে পরিবারের অন্যদের সম্পৃক্ততা নেই।

লালপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ সেলিম রেজা জানান, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয়রা রানু বেগমকে মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সুস্থ হওয়ার পর শিশুটিকে মায়ের থেকে আলাদা রাখার আশ্বাস দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ০৯, ২০২০)