কক্সবাজার  প্রতিনিধি : সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে সোমবার সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সমিতি পাড়া সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ট্রলার বিধ্বস্ত নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার তিন দিন পর পুলিশের পক্ষে দাবি করা হচ্ছে একটি ফিশিং ট্রলার বিধ্বস্ত হয়েছে। ওটা মালয়েশিয়াগামি ট্রলার ছিল না এবং ওখানে কেউ নিখোঁজ কিনা তারা নিশ্চিত নন। এমনটি ওই দিন উদ্ধার হওয়ার ব্যক্তি কোথায় তাও জানেন না। এর একদিন পর মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়ার লাশের পরিচয় পাওয়া না গেলেও তা কোন এক জেলের বলে মন্তব্য পুলিশের।
অথচ সোমবার এ ঘটনায় উদ্ধার হওয়া নরসিংদীর হাদিয়াবাদ গ্রামের জহিরুল হকের পুত্র মোহাম্মদ শাহীন জানিয়েছেন, নারায়নগঞ্জের দালাল নজরুলের সাথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য দেড় লাখ টাকার চুক্তিতে তিনি সহ ১১ জন কক্সবাজার আসেন শুক্রবার। কক্সবাজার সাগর পাড়ের একজন দালালের ঘরে তাদের রাখা হয়। শনিবার রাতে তাদের একটি মাছ ধরা নৌকায় তোলা হয়। নৌকায় মোট ৩০ জন ছিলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর সাগর সাংঘাতিক উত্থাল হয়ে উঠে। রোববার রাতে নৌকাটির তলা ফুটো হয়ে ডুবে যেতে আরম্ভ করে। সাগরে ডুবে যাওয়ার পর তিনি একটি কাঠ ধরে ভেসে তীরে আসলে তাকে সেখানে কিছু লোক উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
শাহীন জানিয়েছেন, তিনি সহ নৌকার ৩০ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে ১০ জন কুলে ফিরলেও অন্যরা কোথাও তিনি জানতেন না।
হাসপাতালে শাহীনের একই জবানবন্ধি নিয়ে ছিলেন কক্সবাজার সদর থানার এসআই ফিরোজ। এ ঘটনায় শাহীনের জবানবন্ধির উপর ভিত্তি করে জাতীয়, স্থানীয় সকল সংবাদ মাধ্যমে সংবাদটি প্রচারিত হয়েছে। এতে অনুমানিক ২০ যাত্রী নিখোঁজ বলে সংবাদে বলা হয়। ঘটনার একদিন মঙ্গলবার কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক পয়েন্টে থেকে উদ্ধার করা হয় এক ব্যক্তির মৃতদেহ। মৃতদেহটি বুধবার বেলা ৩ টা পর্যন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তার পরিচয়ও মিলে। একই সঙ্গে বুধবার থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধিন মোহাম্মদ শাহীনের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। এর পর পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলেও সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। ঘটনার তিনি পর পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। হয়নি কোন মামলাও।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, একটি ফিশিং ট্রলার বিধ্বস্ত হয়ে সাগরে ভেসে আসে।
ওটি মালয়েশিয়া ট্রলার এটা কিভাবে নিশ্চিত হওয়া কেন এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ বিধ্বস্ত ট্রলার থেকে কেউ উদ্ধার হয়নি। কেউ নিখোঁজও নেই।
মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়া লাশটি কোন এক জেলের বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন, মালয়েশিয়াগামি ট্রলার বিধ্বস্ত হওয়া, নিখোঁজ থাকার কোন তথ্য তিনি জানেন না।
অথচ সোমবার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধিন শাহীনের জবানবন্ধির পর কক্সবাজার সদর থানার এসআই ফিরোজ জানিয়েছিলেন, অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে একটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে একজন উদ্ধার করা হয়।
এদিকে সোমবার মালয়েশিয়াগামী ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী নৌকাটি দ্বিখন্ডিত হয়ে ভেসে আসে কক্সবাজার সৈকতের সমিতি পাড়া এলাকায়। সকালে নৌকাটি ভেসে আসার পর সমিতি পাড়ার লোকজন নৌকার কাঠ কেটে-কুটে লুঠ করে নেয়। কক্সবাজার থানার উপ পরিদর্শক ফিরোজের নেতৃত্বে আরেকদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেও এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। বরং পুলিশের উপস্থিতেই নৌকাটির ভগ্নাংশ প্রকাশ্যে লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ঘটনাস্থলে যান কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারি উপ পরিদর্শক জয়নাল এবং ইউসুফ। তারা সেখানে গিয়ে নৌকার ইঞ্জিনটি জব্দ করেন।
কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের ওসি এএসএম আজাদ জানিয়েছেন, নৌকার ইঞ্জিনটি জব্দ রয়েছে। এব্যাপারে তিনি সাধারণ ডায়েরীও করেছেন।
(টিটি/এএস/আগস্ট ০৬, ২০১৪)