স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সমস্যার পরিধি। এখানে নিত্যদিনের বড় এক ভোগান্তির নাম বর্জ্য। বাসাবাড়ির ময়লাসহ রাজধানীতে প্রতিদিন উৎপন্ন হয় বিপুল পরিমাণ বর্জ্য। এসব বর্জ্য অপসারণে হিমশিম খেতে হয় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে। যে কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য বিস্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।

ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক হাজার ৩১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিএনসিসির বর্ধিতাংশের জন্য আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ প্রকল্পের জন্য দুটি টায়ার ডোজার, ছয়টি হাইড্রোলিক স্কেভেটর, দুটি হাইড্রোলিক লং বুম স্কেভেটর, ছয়টি বুলডোজার-চেইন ডোজার, দুটি পে-লোডার, পাঁচটি ডাম্প ট্রাক (১০ টন), দুটি ওয়েস্ট কম্পেক্টর কিনবে সংস্থাটি। এছাড়াও ওয়ার্কশপ বিল্ডিং, স্টোরেজ হাউজ, সাব-স্টেশন রুম ও সিকিউরিটি ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগ রয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়।

প্রায় ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক পরিষ্কার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজের প্রকল্পের জন্য মেকানিক্যাল রোড সুইপার মেশিন, এপেক্স-সোয়াম্প টাইপ চেইন ডোজার, বেকহো-লোডার, কম্পেক্টর ট্রাক কিনতে চায় সংস্থাটি। এছাড়া ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সম্প্রসারিত এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্পে এসটিএসের জন্য তিন একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন (৪৯ হাজার ৩২৮ ঘনমিটার মাটি ভরাট), ১৪১৩ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, ৪০০৮০ বর্গমিটার এলাকার কার পার্কিং নির্মাণ, ৭৮৪৬ বর্গমিটার স্টোর বিল্ডিং নির্মাণ, ৩২৫৪ বর্গমিটার ওয়ার্কশপ নির্মাণ, ৩৩১ বর্গমিটার ইউটিলিটি বিল্ডিং নির্মাণ, ৩৬টি এসটিএস নির্মাণ, ১৮টি ওয়ার্ড অফিস নির্মাণ, পাঁচ ধরনের বর্জ্য অপসারণ যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন ২৩০০-২৬০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহন করে ল্যান্ডফিলে নেয়া হয়। তবে ফলের মৌসুমে তা বেড়ে ৩০০০-৩২০০ টনে গিয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া নতুন ওয়ার্ডগুলো যুক্ত হওয়ার পর থেকে বর্জ্যের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। দুই বছর আগে ডিএনসিসির প্রতিটি সড়কের ওপর কন্টেনার রেখে সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে ৫২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সদ্যবিদায়ী মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে বিস্তর পরিকল্পপনা গ্রহণ করেছে। এছাড়া সেকেন্ডারি রোড, টারশিয়ারি রোড এবং প্রাইমারি রোডের বর্জ্য অপসারণে দুটি মেশিন আনা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আরও ১২টি মেশিন যোগ হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমিনবাজারে যে ল্যান্ডফিল (বর্জ্যভূমি) আছে সেটা অস্বাস্থ্যকর। ২০০৫ সালে এটা করা হয়েছিল। এখন যে ল্যান্ডফিল করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেখানে বর্জ্য সিগ্রেগেশন (পৃথকীকরণ) হবে। বর্জ্যকে আমরাও কাজে লাগিয়ে সম্পদে রূপান্তর করতে পারি। আগামী দিনে ময়লা বা বর্জ্য থেকে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব।

অন্যদিকে বর্জ্য ডাম্পিং প্রকল্পের জন্য আরও ৮১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। যার প্রাথমিক কাজ চলমান রয়েছে। নতুন সম্প্রসারিত ৮১ একরের মধ্যে ৫০ একর ল্যান্ডফিল ও ৩১ একর জায়গা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে। এতে বড় ধরনের একটি দগ্ধকরণ অংশ নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে দুটি পৃথক অংশ থাকবে যার মধ্যে একটিতে সাধারণ বর্জ্য এবং অন্যটিতে ইলেকট্রনিক বর্জ্য দগ্ধ করা হবে।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১১, ২০২০)