গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাফিকুল (১৩) নামে এক কিশোরকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ওই কিশোরকে শত শত মানুষের সামনে এমন অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। 

নির্যাতনের শিকার রাফিকুল বর্তমানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছে। গাইবান্ধার পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নির্যাতনের শিকার রাফিকুল সুন্দরগঞ্জের ধুমাইটারী গ্রামের বাসিন্দা। সে স্থানীয় একটি ইটভাটার শ্রমিক।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকালে সুন্দরগঞ্জের ধুমাইটারী গ্রামে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। পরে এ নির্যাতনের ভিডিওটি অজ্ঞাত ব্যক্তির মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। রবিবার সন্ধ্যায় নির্যাতনের ভিডিওটি গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে এলে তারা ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

ওই কিশোরের স্বজনদের অভিযোগ, প্রতিবেশী ফজলু, ইয়াজল ও নাজমুলের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তাদের পারিবারিক বিরোধ চলছে। তারা গরু চুরির মিথ্যা অভিযোগে গত শুক্রবার রাতে রাফিকুলকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করে। পরে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দশ হাজার টাকা দাবি করে। পরিবারের লোকজন তাৎক্ষণিক তিন হাজার টাকা দেওয়ার পরও তারা রাফিকুলকে রাতভর আটক রেখে মারধর করে।

পর দিন শনিবার সকালে গ্রামের শত শত নারী-পুরুষের সামনে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাফিকুলকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে ফজলু, ইয়াজল ও নাজমুল। কিশোর রাফিকুলের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামের মানুষের সামনে রাফিকুলের ওপর এমন নির্মম নির্যাতন চালালো অথচ কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। নির্যাতনের শিকার রাফিকুল একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর নির্যাতনকারীরা ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ায় আমরা মুখ খুলতে এবং অভিযোগ করতে সাহস পাইনি। অজ্ঞাত একজনের কাছে মোবাইলে ধারণ করা নির্যাতনের ভিডিও দেখে আমি বিষয়টি পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানাই।’

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. বিশ্বেশ্বর চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘মারধরের শিকার কিশোরের দুই পা-হাত ও শরীরে বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।’

এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের পরিবারের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভিডিও দেখে ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। এরইমধ্যে নির্যাতনের শিকার রাফিকুলের ভাই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।’

(এস/এসপি/জানুয়ারি ১৩, ২০২০)