স্টাফ রিপোর্টার : এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের অপসারিত কাউন্সিলর। খেলার ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনার অন্যতম মূলহোতা বলেও তাকে আখ্যা দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অবৈধভাবে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগে তার নামে দুদকে মামলা রয়েছে। এত কিছুর পরও এবার সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন তিনি। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ক্যাসিনো থেকে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ থাকলেও কীভাবে নির্বাচন করছেন তিনি?

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে সিআইডি। দীর্ঘ তদন্তের পর গ্রেফতার করা হয় তাদের। এ বিষয়ে দুপুরে মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ।

এনামুল ও রূপনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে ক্যাসিনো-সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন করার অনুমতি চান এক সাংবাদিক।

বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা ও আসামিদের জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘ঢাকায় ক্যাসিনো কাণ্ডের মূলহোতা মমিনুল হক সাঈদ, অথচ তাকে আপনারা গ্রেফতার করছেন না। এ সুযোগে উনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এই কালো টাকা তার নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করা হচ্ছে। আপনাদের কাছে মামলা থাকার পরও কেন তাকে ছাড় দেয়া হচ্ছে?’

জবাবে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ক্যাসিনোকাণ্ডে সিআইডি শুধু ৯টি মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলা দেখছে। সাঈদ কমিশনারের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং রিলেটেড কোনো মামলা আমাদের কাছে নেই। কিন্তু তদন্তের ফাইল খোলা আছে। মানি লন্ডারিংয়ের ৯টি মামলা ছাড়াও ১০টি মামলা রয়েছে। সেগুলো তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে যারা অভিযুক্ত তাদের ধরা হবে।’

ওই সাংবাদিক পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে কী আপনি বলতে চাইছেন যে, জি কে শামীমসহ অন্য যাদের আপনারা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তাদের জবানবন্দিতে ক্যাসিনো সাঈদের নাম আসেনি?’

জবাবে সিআইডির ডিআইজি বলেন, ‘তদন্তাকালীন সময় স্পেসিফিকভাবে (সুনির্দিষ্ট) এগুলো নিয়ে কথা বলা যাবে না। যখন আসবে আমরা সেটা গণমাধ্যমে প্রকাশ করব।’

এর আগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ আত্মগোপনে চলে যান। তিনি বিদেশে থাকার সময়ই তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছিল, খেলার ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনার অন্যতম রূপকার সাঈদকে তারা খুঁজে পাচ্ছে না।

এর তিন মাস পর গত ২৬ ডিসেম্বর তিনি আবারও ঢাকায় ফেরেন। এর আগেই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সাঈদ অসৎ উদ্দেশে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাসিনো ব্যবসাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে চার কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬১ টাকা অর্জন করেছেন। তবে গণমাধ্যমে দুদকের এ মামলাকে ‘গাঁজাখুরি মামলা’ বলে মন্তব্য করেছেন সাঈদ।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ জানতে পারে, রাজধানীর ইয়ংমেন্স ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবের ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রণ ছিল সাঈদের হাতেই।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৩, ২০২০)