নিউজ ডেস্ক : নির্বাচন চলার মাঝেই বিএনপির দ্বিতীয় দফা সংবাদ সম্মেলনের খবরে সংবাদকর্মীরা ধরেই নিয়েছিলেন দলটি হয়তো এবার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেবে। কিন্তু না; নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই দাবি করে বিএনপি নেতারা বলেন, ‘তারা ভোটে আছেন। ইভিএমে ভোট কারচুপির শেষটা দেখতে চান।’

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগর বিএনপির প্রধান কার্যালয় নসিমন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানান চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী আবু সুফিয়ান।

আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এখানে ভোটের কোনো পরিবেশ নেই। মানুষের সঙ্গে প্রহসন করা হয়েছে। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে আমি এ নির্বাচন স্থগিত ও পুনর্নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়ার কথা জানিয়েছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে খেয়াল করলাম এর পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে ১০০ ভাগ কেন্দ্র ওরা দখল করে নিয়েছে। এখানে আমার জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। '

বিএনপিপ্রার্থী বলেন, ‘আপনাদের মনে প্রশ্ন, কেন আমি নির্বাচন বর্জন করছি না। আমরা এর শেষটা দেখতে চাই। ইভিএমের ডিফেক্টিভিটিগুলো জানতে চাই। এখন তো ভোটারদের ভোট ছাত্রলীগ-যুবলীগ দিচ্ছে। এর মাঝেও যেসব ভোটার ভোট দিতে পেরেছে, তাদের মতামতটা দেখতে চাই। ভোটের পর ইভিএমকে ওরা কীভাবে ম্যানুপুলেট করে তাও দেখতে চাই।'

তিনি বলেন, ‘সকাল ৯টায় এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র থেকে বিএনপিকর্মীদের বের করে দেয়া হয়। সকাল ৯টায় এনএমসি চৌধুরী স্কুলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা চালিয়ে বিএনপিকর্মীদের মারধর করে। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম আহত হন। সকাল ১০টায় হাসান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র দখল করে আওয়ামী লীগের কর্মীরা একতরফা ভোট দেয়। হামলায় আহত যুবদল নেতা খোরশেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এখন পর্যন্ত দুজন গুরুতরসহ অন্তত ৫০ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়েছে নৌকার সমর্থকদের হাতে।'

আবু সুফিয়ান আরও বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের সহায়তায় নৌকার কর্মীরা একটি প্রহসনের ভোট চুরির নির্বাচন করেছে। নির্বাচনের নামে তামাশার আয়োজনে জাতি লজ্জিত ও হতাশ। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে এমনিতেই (এমনিতেই) জাতির আস্থা নেই। এ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে তা প্রমাণিত। এ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে না, তা আরও একবার দেখলো জনগণ।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ মনে করেছিল একটি উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কিন্তু জাতি আজ সকাল থেকে যা দেখল তা হচ্ছে, তামাশার নির্বাচনের জন্য ইসির যে আয়োজন ছিল সেটা স্পষ্ট। কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। সকাল ৯টার পরও সব কেন্দ্র দখলে নিয়ে নৌকার সমর্থকরা ইভিএমের প্যানেল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কেন্দ্রে কেন্দ্রে সাধারণ ভোটারদের যেতে বাধা দেয়া হয়।’

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গতকাল রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকায় বোমাবাজি করে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। এরপরও যারা ভোট দিতে আসছেন তাদের পছন্দ মতো ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না। ভোটাররা শুধু তাদের ফিঙ্গারটাই দিচ্ছেন। এরপর তাদের ভোট দিচ্ছেন অন্যরা। গতকাল রাত থেকেই আমাদের এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হয়। এরপরও যারা সকালে এজেন্টের দায়িত্ব পালনের জন্য ভোটকেন্দ্রে গেছেন তাদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। অনেককে কেন্দ্রে প্রবেশ করতেই দেয়া হয়নি।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা গেলেও তারা গোপন কক্ষে গিয়ে নিজের ইচ্ছা মতো ভোট দিতে পারছেন না। নিজেদের দখলে নেয়া কেন্দ্রগুলোতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরা ভোটারদের ফিঙ্গার দেয়ার পর জোর করে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছে। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই সেই ভোট দিচ্ছে।

এ উপ-নির্বাচনে ১৭০টি কেন্দ্রে মোট ভোটার চার লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৪১ হাজার ১৯৮ জন। মহিলা ভোটার দুই লাখ ৩৩ হাজার ২৮৭ জন। এর মধ্যে বোয়ালখালী অংশে ৬৯টি কেন্দ্রের বিপরীতে ভোটার এক লাখ ৬৪ হাজার ১৩১ ভোট। চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ (শহরের অংশ) এলাকায় যথাক্রমে ৬১ ও ৪০টি কেন্দ্র রয়েছে। এখানে মোট ভোটার তিন লাখ ১০ হাজার ৩৫৪ জন।

বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হয় এ আসন।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৩, ২০২০)