স্টাফ রিপোর্টার : হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বরসতী পূজা উপলক্ষ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে আগামী ৩০ জানুয়ারিই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হবে বলে নিশ্চিত করেন প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত।

এ সংক্রান্ত রিটের অধিকতর শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ার) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট খারিজ করে দেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাস গুপ্ত। তার সঙ্গে ছিলেন, রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট অশোক কুমার ঘোষ। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক।

এর আগে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সরস্বতী পূজার শেষ দিন ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের ভোটের তারিখ পেছানোর জন্য রিটের শুনানি করে বিষয়টি আদেশের জন্য অপেক্ষমান রাখেন একই বেঞ্চ। আজ আদেশর নির্ধারিত দিনে অধিকতর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রিট খারিজ করে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে তারিখ অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। কিন্তু ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা থাকায় ভোটের তারিখ পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে এক রিট আবেদন করেছেন আইনজীবী অশোক কুমার ঘোষ।

শুনানিতে রানা দাস গুপ্ত বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে (সিইসি) আগেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন পূজার দিনই ভোটের তারিখ ঠিক করেছেন। এরপর আমরা আদালতে এসেছি। তখন আদালত বলেন, আপনারা একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা (এসএসসি পরীক্ষা) শুরুর দিন এবং নির্বাচন কমিশনের ভোট গ্রহণের একটি প্রস্তুতি সবকিছু মাথায় রেখে চিন্তা করতে হয়। এ সময় আইনজীবী রানাদাসগুপ্ত বলেন, রাষ্ট্র যদি মনে করে আমরা কম্প্রোমাইজ করবো। ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের বিষয়টি রাষ্ট্র দেখবে।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, রাষ্ট্রীয় সব আচার-অনুষ্ঠান যথাযথভাবে দেখে কমিশন ভোটের দিন ঠিক করে। ঢাকা সিটির জন্য যে ভোটের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে, তা আগানো বা পেছানো ঠিক হবে না।

আদালতে রিটকারী আইনজীবী রানা দাস বলেন, সংবিধানের ৮, ১২, ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিককে ধর্ম পালনের যে মৌলিক অধিকার দেয়া হয়েছে, নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদগুলোর সাথে ‘সাংঘর্ষিক’।

৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি দিনের দ্বিতীয় ভাগ থেকে ৩০ জানুয়ারি আধাবেলা সরস্বতী পূজা। এ পূজা দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচন হলে তার কয়েক দিন আগেই ভোটের কার্যক্রম শুরু হবে। পূজা পালনে বিঘ্ন ঘটবে বা পূজার আচার-আনুষ্ঠানিকতা বাধাগ্রস্ত হবে।

এর আগে করা রিট আবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ মুসলিম দেশ নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক দেশ। ফলে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতেই ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হোক।’

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষিত তারিখ ৩০ জানুয়ারি কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে রুলও চাওয়া হয় রিটে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিব ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে রিটে বিবাদী করা হয়।

এর আগে পূজা উদযাপন পরিষদও সরস্বতী পূজার বিষয়টি তুলে ধরে ভোটের দিন পরিবর্তনের অনুরোধ করেছিল ইসির কাছে। তারপর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদও একই অনুরোধ করে। নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও মানববন্ধন হয়।

দেশের সর্ববৃহৎ পূজামণ্ডপ রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকায় স্বরস্বতী পূজার মূল কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পড়েছে। এখানে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র পড়েছে, যেখানে প্রতিবছরই সরস্বতী পূজার আয়োজন হয়।

৩০ জানুয়ারির পর ৩১ জানুয়ারি শুক্রবার হলেও এ দিনে ভোটের নজির বাংলাদেশে নেই। তার পরদিন ১ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। পরীক্ষার সময়টা এড়িয়েই ভোটের দিন ঠিক করে ইসি। ফলে ভোট পেছাতে হলে পরীক্ষাও পেছাতে হবে।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২০)